রুশ বাহিনী চলে যাওয়ার পর রাজধানী কিইভ উপকণ্ঠের ছোট্ট শহর বুচার বাসিন্দারা প্রিয় শহরে ফিরতে শুরু করেছেন। পোড়া কঙ্কালের রূপ নেওয়া শহরে তারা নিজেদের খুঁজে ফিরছেন।
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বোহ্ডান জুবচাক একজন কমিউনিটি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। যিনি বুচার শান্ত সড়কে পাহারা দিতেন। বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া ছোট খাটো অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি শহরে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট অপরাধ কাণ্ড সামাল দিতেন।
গত মাসের শেষ দিকে রাশিয়ার হানাদার বাহিনী বুচা ছেড়ে চলে গেলে সেখানে সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেরকম এক সড়কে হাঁটতে হাঁটতে ২৯ বছরের জুবচাক বলেন, তার শহর আর তার চাকরি কোনোটিই আর কোনো দিন আগের আবস্থায় ফিরে আসবে না।
বলেন, আমরা এখানে যা দেখেছি তা কোনো দিন ভুলতে পারবো না। সারা জীবন আমাদের ভয়াবহ এই স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলতে হবে।
জুবচাক জানান, রুশ বাহিনী চলে যাওয়ার পর তিনি এবং তার সহকর্মীরা নগরীর বেঁচে যাওয়া ভয়াবহ আতঙ্কগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় কাজ করছেন। ওইসব মানুষদের মানবিক সহয়তা দেয়া থেকে শুরু করে শহরময় পড়ে থাকা অবিস্ফরিত অস্ত্র পরিষ্কার, সবই তাদের করতে হচ্ছে।
রুশ বাহিনী চলে যাওয়ার পর শত শত মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেইন কর্তৃপক্ষ। বুচার ডেপুটি মেয়র বলেন, রাশিয়ার বাহিনী সেখানে ৩৬০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।
বুচায় হত্যাকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক বিশ্বের নিন্দার ঝড় উঠে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ দেয়া হয় রাশিয়াকে। যদিও রাশিয়া বার বার দাবি করছে, তারা বুচায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেনি। বরং ইউক্রেইন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা ভুয়া ছবি প্রকাশ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
তবে রয়টার্স বুচায় নিহত পাঁচটি মৃতদেহ প্রত্যক্ষ করেছে। যাদের খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মৃতদেহের একটির হাত বাঁধা এবং অন্য একটির পা বাঁধা ছিল। তবে তাদের কোন পক্ষ হত্যা করেছে তা রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি।
স্থানীয় কর্মী এবং বাসিন্দারা শনিবারের মধ্যে বুচায় সড়কে যত্রতত্র পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু গোলার আঘাতে আগুন ধরে যাওয়া পোড়া ছাই এবং পুড়ে যাওয়া সিমেন্টের বেদি এখনো পড়ে আছে।