২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ২ ডিসেম্বর। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৬২১ টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিলম্বে শুরু হওয়া এই পরীক্ষা চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের পরীক্ষায় ১১ টি বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার ১৮৩ টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র সাত লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৩৩ হাজার ৯০১ জন।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকসহ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এ পরীক্ষা (এইচএসসি) শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ বছর যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আক্রান্তের হার সহনীয় মাত্রায় উন্নীত হওয়ায় পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সিব বোর্ডের পরীক্ষার্থীর পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষা দিচ্ছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ১১৩ জন। ছাত্রী পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৪ জন।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬১ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ৫১ হাজার ৪০৬ জন।
এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অর্ধীনে এইচএসসি (বিএম./ভোকেশনাল) পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ চার হাজার ৮২৭ জন। ছাত্রী ৪৩ হাজার ৬৪২ জন।
সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ড: শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিন লাখ ১৪ হাজার ৭০৪ জন, রাজশাহী বোর্ডে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৪৫ জন, কুমিল্লা বোর্ডে এক লাখ ১৭ হাজার ৩০৯ জন, যশোর বোর্ডে এক লাখ ৩১ হাজার ১৫৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে এক লাখ এক হাজার ১০২ জন, বরিশাল বোর্ডে ৬৮ হাজার ৪৪১ জন, সিলেট বোর্ডে ৬৭ হাজার ৭৯২ জন, দিনাজপুর বোর্ডে এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫ জন এবং ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৭০ হাজার ৯৩৪ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে।
এর পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে এক লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে মোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার মোট ১৫ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তবে তাদের মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এসব শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই তথ্য এখন আমাদের কাছে নেই, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়ার পর তা জানা যাবে। পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, তাই পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে সেটি ঝরে পড়া বলা যাবে না।

পরীক্ষার সময় যেসব নিয়ম মানতে হবে: পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থীকে এর পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে ঐদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না, শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোন (ছবি তোলা যায় না এমন ফোনসেট) ব্যবহার করতে পারবেন।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধিসহ অন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও কেন্দ্রে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাজার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা এবং অভিভাবকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও বাইরে অভিভাবকরা তোয়াক্কা করছেন না বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা: এবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রæতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হবে। তবে অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিদের ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
যে কয়টি বিষয়ে পরীক্ষা: করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে গ্রæপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান বিভাগে এমসিকিউ ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১৫ মিনিট। তত্ত¡ীয় পরীক্ষায় ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ২টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। পরীক্ষার মোট সময় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
মানবিক ও ব্যবসায় শাখার পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ ৩০টির মধ্যে ১৫টি উত্তর দিতে হবে। এ জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ মিনিট। তত্ত¡ীয় ১১টির মধ্যে তিনটির উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার মোট সময় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। পরীক্ষা শুরুর আগে কক্ষ প্রত্যবেক্ষকগণ উচ্চস্বরে পরীক্ষার সময়ের বিষয়টি পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই অবহিত করবেন।
বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষা: এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে জেদ্দায় ১১৪ জন, রিয়াদে ৭৪ জন, ত্রিপলীতে দুইজন, দোহায় ৭৯ জন, দুবাইয়ে ২৬ জন, বাহরাইনে ৫৮ জন, সাহাম ও ওমানে ১৯ জনসহ মোট ৪০৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
কোচিং সেন্টার বন্ধ: পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কেউ যেন কোনো ধরনের কোচিং সেন্টার খুলে না রাখেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আগামীতে পরীক্ষার সময় পেছানোর চিন্তা: যানজটের কারণে আগামী এসএসসি সমমান ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষা (অফিস সময়) সকাল ১০টায় না নিয়ে পরে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অভিভাবকদের পক্ষে দাবি জানানো হচ্ছে, পরীক্ষাগুলো শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। তখন অফিস আওয়ারও থাকে। প্রচÐ যানজট হয়। অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ে আসতে পারেন না। পরীক্ষার সময় দুপুরের দিকে করা যায় কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ভাবনায় আছে। আজকের সভায়ও আলাপ করেছি। এবার যে পরীক্ষাটি হচ্ছে সেখানে এই পরিবর্তনটা আনতে পারছি না। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয় আছে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে আমরা চেষ্টা করতে পারি। বিশেষ করে যেদিন সবচাইতে বেশি পরীক্ষার্থী থাকে অর্থাৎ মূল বিষয়গুলো বা আবশ্যিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয় সেদিনগুলোতে পরীক্ষা আরেকটু পরে শুরু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আগামী বছর। এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে।