দীর্ঘ দুই বছর পর মঙ্গলবার স্বাভাবিক রুটিনে ফিরেছে স্কুল-কলেজগুলো। পুরোপুরিভাবে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। প্রথম দিনেই রাজধানীসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল ব্যাপক। এসময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গণ।
এদিকে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এসব শিশু শ্রেণিতে আপাতত সপ্তাহে দুইদিন সশরীরে পাঠদান হবে বলে জানা গেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় বন্ধের পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় সশরীরে শিক্ষাকার্যক্রম। চলছিল অনলাইন কার্যক্রমও। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পুরোদমে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সোমবার জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে-করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার কমে যাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ বিভাগের আওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান ১৫ মার্চ থেকে অব্যাহত থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশটি ইউজিসি চেয়ারম্যান, সব বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, মাউশির মহাপরিচালক, সব জেলা প্রশাসক, সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাউশির সব আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক, সব জেলা শিক্ষা অফিসার এবং সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর বিতরণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, করোনা মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৫ মার্চ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা এতদিন ক্লাস শুরু করতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হয়েছে। এ অবস্থায় ১৫ মার্চ থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত নোটিস দেওয়া হবে। একইসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে বলে দেওয়া হবে।
দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা প্রাক-প্রাথমিকেও ১৫ মার্চ থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হলেও চলছে সীমিত পরিসরে।
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। তখন শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয় অনলাইনে। দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে এ বছরের শুরু থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করলে গত ২১ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধের ঘোষণা আসে। পরিস্থিতির উন্নতিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর ২ মার্চ খোলে প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানুয়ারিতে বন্ধের আগের রুটিন অনুযায়ী এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের চারটি বিষয়ে এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাসের সুযোগ দেওয়া হয়। আর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে দুইদিন তিন বিষয়ে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একদিন সশরীরে তিন বিষয়ের ক্লাস চলে। বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়। তবে সপ্তাহে একদিন সশরীরে ক্লাস রুটিন থাকলেও বয়সজনিত কারণে টিকার বাইরে থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। একই সময়ে অনলাইনে ক্লাসেও জটিলতা দেখা দেয়। তাই মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে ক্লাস চালুর খবরে বেশি উচ্ছসিত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে দুই বছর পর খোলায় উচ্ছসিত প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।
১৫মার্চ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলেও মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাঠদান হবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত শনিবার তিনি বলেন, এ সিলেবাসের আলোকে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা কোনো চাপে থাকুক। নতুন কারিকুলাম চালু হলে পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন থেকে বের হয়ে আসা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনের লেখাপড়া মূল্যায়ন প্রতিদিনই হবে। বছর শেষে সীমিত আকারে পরীক্ষা হবে, সারা বছরের মূল্যায়ন সমন্বয় করে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হবে।