পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের চর্চা অনুসরণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশালসংখ্যক প্রতিনিধি নেওয়ার সরকারের সমালোচনায় মুখর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সমালোচনা করেন।
ব্যতিক্রমী দেশের তালিকাভুক্ত হওয়ার বিব্রতকর রেকর্ড অব্যাহত রাখায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শতাধিক প্রতিনিধি প্রেরণের বিনিময়ে দেশ ও জনগণ তথা করদাতাগণের কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু? এই প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘পতিত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে বিশাল আকারের প্রতিনিধিদল প্রেরণ স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়, যা সংখ্যার বিচারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুইশতাধিক পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। আমরা আশা করেছিলাম ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিনির্ভর সুশাসনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার এ ধরনের চর্চা পরিহার করবে।
দুঃখজনকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার একই পথ অনুসরণ করলো। পরিতাপের বিষয় দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারকর্তৃক অহেতুক বিদেশ সফরের মাধ্যমে জনগণের অর্থের অপচায় বন্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, শতাধিক প্রতিনিধির ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণের স্ববিরোধী এ ঘটনার মাধ্যমে সরকার নিজেই তার অবস্থান সম্পর্কে আস্থাহীনতা তৈরি করলো।’
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো পরাশক্তির দেশগুলো জাতিসংঘে তাদের বহুমাত্রিক প্রভাববলয় বজায় রাখার কূটনৈতিক ভূমিকা নিশ্চিতে তুলনামূলক বড় দল পাঠায়, তা-ও শতাধিক হওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল।
অন্যদিকে নাইজেরিয়ার মতো কিছু সুশাসনবর্জিত দেশের বড় প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রবণতার পেছনে কূটনীতির নামে ‘‘ভ্রমণবিলাস’’ ছাড়া অন্যকোনো যুক্তি পাওয়া যায় না উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘গতবছর সাধারণ অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকার ৫৭ জনের প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে জনগণের অর্থের অপচয় পরিহারের সম্ভাবনার সূচনা করেছিলো ভেবে আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম যে, এ বছর হয়তো সংখ্যাটি আরও কমতে পারে। অথচ এবার পশ্চাৎ-মুখী হয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনামলের বিব্রতকর চর্চার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
জনগণের করের টাকায় বিশালসংখ্যক প্রতিনিধি প্রেরণের খরচের পাশাপাশি বর্হিবিশ্বের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মূল্য বিবেচনায় প্রতিনিধিদের কার কী ভূমিকা তা নির্ধারণ সাপেক্ষে দলটি গঠিত হয়েছে কী? অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অর্থবহ অংশগ্রহণ এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় প্রতিনিধিদলের সম্মানিত সদস্যগণ কোন পরিমণ্ডলে, কী ভূমিকা পালন করবেন, এসব কতটুকু বিবেচিত হয়েছে? এ ধরনের প্রশ্নের জবাব জনগণ পাবে কী? এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা উচিত।’
গণঅভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ জাতীয় প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টান্ত বিব্রতকর ও হতাশাজনক মনে করে টিআইবি।