পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অনতিবিলম্বে অপসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘সবাই আমরা একমত পতিত স্বৈরাচার-মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।’
তারেক রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ‘ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে’ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য শারদীয় দূর্গোৎসব উত্তর শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় লন্ডন থেকে ‘ভার্চূয়াল প্লাটফর্মে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে বলেন, নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু তারা সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোন একটি ঘটনারও বিচার করেনি।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে তাবেদার সরকারের সময় আমরা দেখেছি সন্ত্রাসীদের দিয়ে অনেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যারা অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষদের রাখা হয়েছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।’
তারেক রহমান বলেন, এ বছরের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান, হিন্দুসহ সকল ধর্মের মানুষ এখন ‘আয়না ঘর’ হতে ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে, বিভিন্ন ধর্ম-গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদেরকে ব্যবহার করে বা কোন ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের-আমাদের নির্বিশেষে সকলকে সর্তক থাকতে হবে।
ভবিষ্যতে সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্ম নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারে তেমন একটি দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার-যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ায় অধিকার সবার’।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্য বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল দুরীকরন শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে, একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা না গেলে, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে! ফলে এই সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবশ্যই এজেন্ডা-ভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সময় উল্লেখ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি এবং জন-প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ‘এ কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ সবাই আমরা একমত-মাফিয়া সরকারের সুবিধাভোগীদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তবর্তী সরকারের লক্ষ্য অর্জন সহজ নয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে যে একটা নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। তিনি বলেন, ‘এবার ৫ আগস্টের পর আবার একটা নতুন সম্ভাবনা এসেছে, তাই আসুন আমরা সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, পতিত শক্তি নানা ধরনের উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। কোনভাবেই এই উসকানির ফাঁদে পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করি।’
ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সকলে মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার দেশটা আমাদের সকলের। ৫ আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর একটি রাষ্ট্র গঠন করি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোন মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোন মুসলমান কখনোই হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে নাএটি কে করছে ? মন্দির ভাঙ্গার সাথে যত জন ধরা পড়েছে সবই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগের। আমার এলাকায় হিন্দুদের যত জমি-জায়গা দখল হয়েছে - তার সবই করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ড. মঈন খান বলেন, ‘মা আসেন প্রতি বছর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগস্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তার প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তার প্রতিফলনে কোন সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদেরকে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোন ভাবনা নেই এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপিতে গোত্র ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান। এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দল।
বিএনপি’র সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু বিশ্বাস অপুর সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. সুব্রত বুড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আফরোজা খানম রিতা, বিএনপি’র ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল প্রমুখ এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।