রাজবাড়ী জেলার বৃহত্তম চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ঔষধ, এমএসআর, গজ-ব্যান্ডেজ, কেমিক্যাল রিএজেন্ট, এক্সরে ফ্লিম ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং ফার্ণিচার ও কিচেন সামগ্রী সহ বিভিন্ন খাতে মালামাল ক্রয়ে কোটি টাকার দরপত্র আহবানে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোন প্রকার বরাদ্দ ছাড়াই রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মালামাল ক্রয়ের জন্য ৮ টি গ্রুপে দরপত্র আহবান করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এস.এম.এ হান্নান। গত ১০ সেপ্টেম্বর ইংরেজী দৈনিক “বাংলাদেশ টুডে” পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বিধি বহির্ভূতভাবে গ্রুপওয়ারী ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং বিভিন্ন সামগ্রীর স্যাম্পল/নমুনা দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ইতোপূর্বে হাসপাতালের এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে নমুণা প্রদানের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সুকৌশলে এসব শর্তারোপ করে আগ্রহী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করেছেন। এনিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহবানে স্বচ্ছতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকারীভাবে ই-টেন্ডার প্রথা চালু করা হলেও দপ্তর প্রধানরা পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে পরস্পর যোগসাজশে নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য গোপনীয় পাসওয়ার্ড তাদের সরবরাহ করে থাকে। এতে করে অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যে দরই উল্লেখ করুক না কেন, তা সহজেই জেনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর জন্য এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মকর্তা/প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দায়ী করছেন ভূক্তভোগীরা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মালামাল ক্রয়ে নানাবিধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাগুরার প্রসিদ্ধ ঔষধ ব্যবসায়ী মামুন ড্রাগস এর স্বত্তাধিকারী মোঃ আজিজুল হক জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বরাবর গত ২৩ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে একখানি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু তত্বাবধায়ক আরোপিত শর্ত জুড়ে দিয়ে আহবানকৃত দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে অনঢ় অবস্থানে থাকায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
এবিষয়ে মামুন ড্রাগস এর স্বত্তাধিকারী মোঃ আজিজুল হক বেআইনী, স্বেচ্ছাচারী ও অসম শর্তারোপকৃত দরপত্র (ডিএসএইচআর/এমএসআর/ই-টেন্ডার/২০২৪-২০২৫/১৭০২ তারিখ-০৮/০৯/২০২৪ )বাতিলের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (১১৬৪৫/২০২৪) মামলা দায়ের করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের উক্ত দরপত্রের কার্যক্রম ৩ মাসের জন্য স্থগিত সহ ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
রিটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, চর্ম ও যৌন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট, নাক,কান ও গলা বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে বিবাদী করা হয়েছে।
এদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ এর পরও তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস.এম.এ হান্নান পছন্দের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইনী বাধা পেড়িয়ে কাজ প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রিটকারী আজিজুল হক।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস.এম.এ হান্নান এর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে এক নারী নিজেকে সেবিকা পরিচয় দিয়ে স্যার অপারেশনে ব্যস্ত বলে জানান।
অভিযোগ রয়েছে, ডাঃ হান্নানের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর আদালতে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বহু নারী-পুরুষকে চেকের বিনিময়ে চড়া সুদে নগদ টাকা ধার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে আদালতে অন্ততঃ এক ডজন মামলা রয়েছে। এসব মামলায় হাজিরা দিতেই ডাঃ হান্নানের প্রায়ই আদালত পাড়ায় দেখা যায়। ফলে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা যা হওয়ার তাই হচ্ছে।