ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার অনেক দোসর। বর্তমানে দেশকে পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। এরইমধ্যে ফ্যাসিবাদে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারের উপদেষ্টারা। বিশেষ করে যারা গত আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষে ছিল বা অভ্যুত্থানে যারা উসকানিমূলক ভূমিকা পালন করেছিল, যেসব গণমাধ্যম বা সাংবাদিক-কবি-সাহিত্যিকরা ফ্যাসিবাদে জড়িত ছিল তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
অথচ এমনই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া দৈনিক কালের কণ্ঠ নতুন করে ফ্যাসিবাদকে উস্কে দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ পত্রিকাটির সিনিয়র রিপোর্টার তৈমূর ফারুক তুষার নিজের পত্রিকা ও ফেসবুক পেজে উসকানিমূলক ও ফ্যাসিবাদের পক্ষেই বক্তব্য তুলে ধরছেন । গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন-‘শীত আসছে। শিবির কমিটি দিচ্ছে। আপনাদের হাত, পা ও রগের যত্ন নিন।’ আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন-‘জামাতের আলোচিত সারোগেট বেবি ও মাদার: ১. ছাত্রলীগের গর্ভ ভাড়া করে জন্ম দিয়েছে শিবির নেতা ২. ছাত্রদের গর্ভ ভাড়া করে জন্ম দেয়া বাচ্চার নাম সমন্বয়ক ৩. আমজনতার পেট থেকে জন্ম দিয়েছে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা'।’
তুষারের আরেকটি স্ট্যাটাস হলো- ‘বহির্বিশ্বে সারোগেসি বেশ পপুলার। কারো সন্তান ধারণে সমস্যা থাকলে বা কোনো নারী নিজের গর্ভে সন্তান ধারণ করতে না চাইলে অন্যের গর্ভ ভাড়া করেন। এটাই সারোগেসি। বাংলাদেশে বিষয়টা পপুলার করে দিল জামাত।’
এসব স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে তিনি মূলত জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদকে নতুন করে উস্কে দিচ্ছেন বলে অনেকে মনে করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ওই স্ট্যাটাসের কমেন্টেও তাকে নানাভাবে সমালোচনা করেছেন অনেকে।
জানা গেছে, তৈমূর ফারুক তুষার দৈনিক কালের কণ্ঠের আওয়ামীলীগ বিটের একজন সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকার ও দলটির পক্ষে বেশিরভাগ সংবাদ প্রকাশ করেছেন। বিগত ছাত্র আন্দোলন এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেও তার নানা তৎপরতা ছিল।
সূত্রমতে, কালের কণ্ঠের একটি বিভাগ ‘শুভ সংঘে’ লেখালেখি করতেন তুষার। এক পর্যায়ে পত্রিকাটির তৎকালীন সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের হাত ধরে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে পত্রিকাটিকে সাংবাদিক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এরপর থেকেই বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। সংবাদ প্রকাশের নামে অনেক আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এমনকি এমপিদের ব্লাক মেইল বা চাপ দিয়ে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তার সেই ফ্যাসিবাদি কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে গত সোমবার এডিটরস ফোরামের এক বৈঠকেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রহমান। তার কর্মকান্ডে জামায়াত-শিবির সহ সাধারণ ছাত্র-জনতার মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
সাংবাদিক তৈমূর ফারুক তুষারের ফ্যাসিবাদী এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। তুষারকে উদ্দেশ্য করে সায়েম হোসেন সাব্বির নামে একজন লিখেছেন- আপনার এত চুলকাই কেনো?
শিবিরে কী আপনার এলার্জী আছে?
তাসমি চৌধুরী নামের একজন বলেন-আপনার কি চুপ থাকতে খুব সমস্যা ভাই!!অযথা কেন এইধরনের লেখা লিখেই যাচ্ছেন! আমরা নিজেরাও আসলে সবকিছু নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে পছন্দ করি!এইসব বাদ দেন। অনেক বুদ্ধদীপ্ত মানুষ আপনারা দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন সেটা ঠিক আছে এইসব জিনিস কি তামাশার বিষয়!! যে ইয়ারকি করেন!!
এদিকে সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে তৈমূর ফারুক তুষারের স্ত্রী পর্বাতোরাহী শায়লা বিথীর ওপর রহস্যজনক হামলা নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ঘটনাকে নিজেদের নাটক বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট অনেকের মন্তব্য-সাংবাদিক তৈমূর ফারুরক তুষার আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে নানা অপকর্ম সহ প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে থাকা নিরাপদ মনে করছেন না তারা। এজন্য নানা নাটকীয়তা করে বাড়তি সুবিধা অথবা বিদেশে পাড়ি জমানোর পথ খুঁজছেন। তবে এসব ফন্দি ফিকির করে যাতে তারা পার না পেতে পারে, সেজন্য তাদেরকে ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর হিসেবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনতে বর্তমান সরকার এবং সংশ্লিদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।