উদ্বোধনের সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি দিনাজপুর সদর উপজেলার গ্রামীণ ৩১টি সড়কের কাজ। দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদাররা বিভিন্ন অজুহাতে ফেলে রেখেছেন সড়ক পাকাকরণের কাজ। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। রংপুর বিভাগীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় যেসব সড়কের কাজ হচ্ছে সেগুলোতে অর্থ সংকুলান না থাকায় কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু হয় দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪১টি সড়ক পাকাকরণ কাজ। দিনাজপুর এলজিইডি এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে ১০টি সড়কের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩১ সড়কের কাজ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবসহ বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন।
সূত্রমতে, দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের খোসালপুর থেকে আমইর মিশন মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এই দেড় কিলোমিটার সড়কে ইটের খোয়া বিছানো হয় তিন বছর আগে। খোয়া বিছানো অমসৃণ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো স্থানে খোয়া সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। এতে এ সড়কে চলাচলের পাশাপাশি উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকার চাষীরা।
শুধু খোসালপুর থেকে আমইর সড়কই নয়, সদর উপজেলার নীলুকাপুকুর থেকে গোয়ালহাট দেড় কিলোমিটার, উত্তর শিবপুর থেকে আমইড় দেড় কিলোমিটার, চেহেলগাজী থেকে গোবিন্দপুর আড়াই কিলোমিটার, খানপুর থেকে পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া দেড় কিলোমিটার সড়কসহ প্রায় ২০ কিলোমিটারের বেশি সড়কে খোয়া বিছানো রয়েছে। এসব গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে দৈনিক শতাধিক ট্রাক্টর বালি বহন করায় সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন কার্পেটিং না করায় কিছু কিছু জায়গায় জন্মেছে ঘাস। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ধুলাবালির কবলে পড়ছে এলাকাবাসী।
সদর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিন্দ্র নাথ জানান, ‘তিন বছর হই গেইল, খোয়া বিছায় থুইছে। খোয়ার তনে রাস্তাত হাঁটাও যায় না, সাইকেলও চালান যায় না। বাহির থাকি অটোরিকশা, ভ্যান এই এলাকাত একবার আসিলে আর আসির চাহে না।’
একই এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, কতদিন হয়ে গেল খোয়া বিছানোর, কিন্তু রাস্তার কাজটা শেষ হচ্ছে না। আগে দু-একবার ঠিকাদারকে অভিযোগও করা হয়েছিল। এখন ঠিকাদারের দেখা পাওয়া যায় না। কাকে বলব রাস্তা ঠিক করার কথা।
দিনাজপুর সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা পর্যায়ে মোট সড়ক রয়েছে ২০টি। যার দৈর্ঘ্য ১৪৯ কিলোমিটার। ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৩টি সড়ক আছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব সড়কই পাকা করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণীর সড়ক রয়েছে ৫৫১টি। যার দৈর্ঘ্য ৬৬৯ কিলোমিটার। এই ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণীর গ্রামীণ সড়কগুলো রংপুর বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় ৪১টি সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এর মধ্যে ১০টি সড়কের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট সড়কগুলোর কাজও প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
এক ঠিকাদার বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একসঙ্গে অনেক কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কাজ চলাকালীন এলজিইডিতে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান না থাকায় একপর্যায়ে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন ঠিকাদাররা।
দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বলেন, জেলায় মোট ১৩টি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান। তবে রংপুর বিভাগীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় যেসব সড়কের কাজ হচ্ছে সেগুলোতে অর্থ সংকুলান না থাকায় কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ সড়কের শুধু কার্পেটিং বাকি আছে। তাছাড়া এ কাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদারেরও গাফিলতি ছিল। তবে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড় এবং পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ বলেন, এরই মধ্যে ঠিকাদারদের কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। আগের চুক্তিমূল্য অনুযায়ী কাজ শেষ করতে হবে। ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যেসব ঠিকাদার কাজ শেষ করতে পারেননি তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করার জন্য জেলা অফিসে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।