হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যার হুমকিদাতাকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জ থেকে হুমকিদাতা সোহাগকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে বলে জানান ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গ্রেপ্তার সোহাগ মিয়া মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের মো. মন্তাজ মিয়ার ছেলে।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক (সুমন) তাকে হত্যার হুমকির ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনায় সিটিটিসি ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ‘হত্যার জন্য একটি টিম মাঠে নেমেছে’ জেনে ২৯ জুন রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন।
বুধবার বিকেল হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন। তিনি জানান, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যা নয়, প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল গ্রেপ্তার সোহাগ মিয়ার উদ্দেশ্য।
আক্তার হোসেন আরও জানান, সোহাগ চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) খুদেবার্তায় জানান, ব্যারিস্টার সুমনের জীবন ঝুঁকিতে, তাকে হত্যা করা হতে পারে।
এ বিষয়ে ২৮ জুন চুনারুঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে হবিগঞ্জ পুলিশ ও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সমন্বয়ে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। সোহাগের প্রতারণতার শিকার তারই এক বন্ধুর কাছে তার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে সোহাগ মিয়াকে সিলেট শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ মিয়া জানান, মোবাইলফোন নয়, হোয়াটসঅ্যাপে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সোহাগ। তিনি ৬-৭ বছর মধ্যপ্রাচ্যে থেকে দেশে আসেন কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। এরপর প্রতারক সোহাগ বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের বিদেশে পাঠাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে অভাব-অনটন দূর করতে এই প্রতারণার পথ বেঁচে নেন।
পুলিশ সুপার জানান, মোবাইলে ভারতীয় একটি প্রতারণার গল্প দেখে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতারণার কৌশল শেখেন। তারই অংশ হিসেবে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন। সোহাগের কাছে ব্যারিস্টার সুমনের ফোন নম্বর না থাকায় ওসিকে খুদেবার্তা পাঠান। তার উদ্দেশ্য ছিল সংসদ সদস্য হুমকির কথা শুনলেই হয়তো বলবেন, কারা হত্যা করতে চায় তাদের নাম বলো। তখন তিনি টাকা চাইবেন। কিন্তু তার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এদিকে জিডিতে ব্যারিস্টার সুমন উল্লেখ করেন, ২৭ জুন ঢাকায় অবস্থানকালে রাত আনুমানিক ২টার সময় চুনারুঘাট থানার ওসি আমার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে জানান যে, আপনাকে হত্যার জন্য অজ্ঞাতনামা একটি শক্তিশালী মহল গত তিন দিন আগে চার-পাঁচজনের একটি টিম নিয়ে মাঠে নেমেছে। আপনি রাতে বাইরে বের হবেন না এবং সাবধানে থাকবেন।
তখন আমি ওসির কাছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানাতে অস্বীকার করেন এবং আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন। বিষয়টি জানার পরে আমি মারাত্মকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
পরে ৩ জুলাই হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক অফিস আদেশে ব্যারিস্টার সুমনের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগের তথ্য জানানো হয়।