শিরোনাম
  • ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না : নাহিদ ইসলাম প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে শিবগঞ্জে ৬৫০ কৃষকের মাঝে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ ও সার বিতরণ ডিএমপির ১০ থানা পেলো নতুন গাড়ি ॥ আরও ৪০টি শিগগিরই হস্তান্তর সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে যা বললেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে : নাহিদ ইসলাম ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে : রিজওয়ানা বাংলাদেশ হতে সমুদ্রপথে হজযাত্রী প্রেরণের সম্মতি সৌদি সরকারের কালুরঘাটে ১১,৫৬০ কোটি টাকার রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন
  • কানসাটে আমের চাঙ্গা হয়েছে আমের বাজার, মোড় ঘুরেছে চাষী ও ব্যবসায়ীদের

    মোহা: সফিকুল ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ

    ২৫ জুন, ২০২৪ ১১:৫২ অপরাহ্ন

    কানসাটে আমের চাঙ্গা হয়েছে আমের বাজার, মোড় ঘুরেছে চাষী ও ব্যবসায়ীদের

    আম একটি রসালো ও অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। সারা দেশে যা আম উৎপাদন তার বেশীর ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তাই বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করেই  চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শতকরা ৮০% মানুষ কৃষক। কৃষি কাজের মধ্যে আম থেকে তাদের থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। তবে কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন প্রতিকুলতার মাঝে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এবার মোড় ঘুরেছে। তাই আমচাষীর খুবই খুশী। ইতিমধ্যে আম পাড়া ও কেনাবেচা শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে শতাধিক বছরের পুরানো এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আম বাজার কানসাটের আম বাজার। ঘটেছে  বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু আমের সমাহার। কানসাটে কেউ প্লাস্টিকের ক্যারেটে, কেউ ডালিতে,কেউ সাইকেলে ও ভ্যানে কেউ বা ভুটভুটিতে করে আম নিয়ে এসেছে বিক্রীর জন্য। বাজারও জমে উঠেছে বেশ। প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে দামও সবচেয়ে বেশী এ বছর। তবে উৎপাদন কম। প্রতি বছরেরর তুলনায়  এবছরের  উৎপাদন ৩০% হবে। 

    আম বাজার ঘুরে  দেখা গেছে হাজার হাজার আম বোঝাই ভ্যান, ভুটভুটি, বাইসাইকেল, মিনি ট্রাক রাস্তার পাশে  কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর প্রকৃত আম বাজারেতো দাঁড়াবার ঠাই নেই। সেখানে সরজমিনে আম বিক্রেতা, ক্রেতা, আম চাষী ও আড়তদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আমের দর খুবই ভাল। 

    কুষ্টিয়া থেকে আগত ফড়িয়া আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, বিক্রেতা ন্যাংড়া আমের দাম চেয়েছেন  ৪৬০০ টাকা মন। আমি বলেছি  তিন হাজার ৮শ  টাকা। তবে চার হাজার টাকা দরে বিক্রী করবে বলে জাানিয়েছে বিক্রেতা। তিনি আরো জানান, গত সপ্তাহে ন্যাংড়া আম  ৩২শ থেকে  ৩৫শ  টাকা দরে  কিনেছি। চককীর্তির এনামুল হক জানান,ন্যাংড়া আম মণ প্রতি  চার হাজার থেকে সাড়ে হাজার মণ দরে বিক্রী হচ্ছে। হাদিনগরের আম চাষী ও ব্যবসায়ী  নাজির হোসেন জানান বর্তমানে আমের বাজার ভাল। যা ২০২২সারের বাজারকে ছড়িয়ে গেছে। সে বছরও আমের দর ভাল ছিল। 

    তিনি জানান,  বর্তমানে লখনা আম মণ প্রতি ১৭/১৮শ টাকা দরে, ফজলী দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা, ক্ষিরসাপাত পাঁচ হাজার টাকা মণ,আম্রপলি  ৩৫শ থেকে চার টাকা,বানানা আম  ৩৫শ থেকে  চাঁর হাজার মণ দরে বিক্রী হচ্ছে। যা ঈদের আগে থেকে আমের ধরণ ও জাত হিসাবে  পাঁচ থেকে  ১৫ শ টাকা মণ প্রতি বেশী দাম পাওয়া যাচেছ। অন্যদি কে আম ব্যবসায়ী মরদানার রুবেল হক জানান এ বছর আমের জন্য অফ ইয়ার হওয়ায় শিবঞ্জের আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ যাদের  গাছে আম ধরেনি তারা এ বছরে একেবারে ফকির হয়েছে। যাদের গাছে আম ধরেছে তারা দাম ভাল পেয়েছে তার রাতারাতি ধনী হয়ে গেলো। আম বিক্রী করতে আসা রানীহাট্টির আম চাষী মামুন জানান, আমের দর ভাল পেলেও কানসাট বাজারে একম মণ বিক্রী করতে এসে বাড়ি থেকে প্রায় ৫৫/৫৮কেজি আম আনতে হচ্ছে। কারণ এখানে  ৫২ কেজিতে মণ ধরা হচ্ছে। তার উপর কাঁটা প্রতি  একটা করে,লেখনি বাবদ একটা করে,  শ্রমিক বাবদ একটা করে ঝাড়ুদদার বাবদ একটা করে দিতে হচ্ছে। তাছাড়া হিজড়া, ডোমরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে  একটা নিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় মণ আম দিতে হচ্ছে। 

    একই কথা জানালেন মাহবুব আলম, শিবনারায়ণপুর গ্রামের সাহেব আলি সহ আরো অনেকে। চককীর্তি ইউনিয়নের রানীবাড়ি চাঁদপুর গ্রামের আম চাষী ইব্রাহিম আলি সহ শত শত আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে কানসাটে শিহাব ফল ভান্ডারের ম্যানেজার বলেন কোন আড়তদার ওজনে বেশী নেয় না। বরং আম বিক্রেতারাই  ৫২ কেজিতে মণ দেয়। এখানে আমাদের কোন লাভ নেই। জননী মিম ট্রের্ডাস আড়তের ম্যানেজার তসিউর রহমান জানান আমরা আমাদের ব্যাপারীর নিদের্শমত  ৫২ কেজিতে মণ ধরছি।আমাদের কিছু করার নেই। একই কথা কানসাট আম বাজারে  প্রায় পাঁচ শ আড়তেই একই ভাবে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ - সোনামসজিদ মহাসড়কে  যানজটের কারণে হাজার হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ চরম হয়রানী শিকার হচ্ছে। দেখা গেছে কানসাট বাজার থেকে উত্তরে  ধোপপুকুর -ে মাবারকপুর, কানসাট -গোপালনগর মোড়,কানসাট –পুখুরিয়া , কানসাট- চামাবাজার পর্যন্ত  হাজার হাজার ট্রাক, সাইকেল, ভুটভুটি সহ বিভিন্ন ধরনর আম বোঝাই ও অন্যান্য পণ্যবাহি যানবাহন  ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে। বছরের পর বছররের পর য  সমস্যার কোন সমাধান নেই জানান শতাধিক বিভিন্ন পেশার মানুষ। 

    এ ব্যাপারে কানসাট আম আড়তদার মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফারুক আহমেদ টিপু জানান আমরা এ মাসের প্রথম দিকে কানসাট,রহনপুর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জের আম চাষী,আম ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সাথে সভা করে  ৪৮ কেজিতে মণ দরে আম ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  কিন্তু তারপরও ৫২ কেজিতে  মণ ধরে আম কেনা বেচা হচ্ছে। এর জন্য কিছুটা দায়ী  নতুন করে কেউ কেউ আম উদ্যোক্তা সেজে আমের ওজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তকে বানচাল করছে। তিনি আরো বলেন আম কাঁচা ফল বহন করতে কিছু ফল নষ্ট হয়। তিনি জানান  এবছরে প্রতিদিন প্রায়  ২০/২৫ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে।  যা আগামী সপ্তাহে  ৩৫/৪০ কোটি টাকার  আম কেনাবেচা হবে। গড়ে এ বছরে শুধু কানসাটেই  প্রায়  দুই হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে এবং জেলায় প্রায় সাড়ে   তিন  হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে  বলে আশা করা হচ্ছে।

    তিনি আরো জানান, কানসাট আম বাজারকে কেন্দ্র করে ভ্যান চালক, সাইকেল চালক,শ্রমিক, হিসাব রক্ষক, আমের ক্যারেট তৈরী করা, ট্রাক চালক,আম পাড়া,পাহাড়াদার সহ  সহ বিভিন্ন কাজে প্রায় সোয়া লাখ মানুষের কর্মস্থান হয়েছে। তিনি আরো বলেন কানসাট বাজারে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হয়। তবে হাট ইজারাদার খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম করছে। তিনি আরো জানান যানজট রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সুনাইন বিন জামান বলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীরা খুব খুশী। দাম ভাল পাচ্ছে। তবে ওজনের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে যা শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হবে। । তিনি  আরো বলেন এ বছরে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায দুই লাখ ২০হাজার মেট্রিক টন। 

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উপপরিচালক পলাশ সরকার জানান, গত এবছর জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  তিন লাখ মেট্রিক টন যা গত বছর ছিল  চার লাশ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরো জানান জেলায় আম বাগানের পরিমান হলো  ৩৭ হাজার  ৬০৪ হেক্টর। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব  গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: মোখলেসুর রহমান বলেন,অফ ইয়ার, অতিরিক্ত খরা,দীর্ঘকালীন শীত থাকা,অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি হওয়া প্রভুতি কারণে আমের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ফলে এ বছর আমের  উৎপাদন কম হয়েছে।




    সারাদেশ - এর আরো খবর