পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন মানিকের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৬ মার্চ) স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে উপকারভোগিদের মাঝে চাল বিতরণ কালে এই অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা এই ঘটনা সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
জানাগেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৩ ২০ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষের জন্য ১৩ দশমিক ২ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় শিবালয় উপজেলা প্রশাসন। যা ৬ এপ্রিল বিতরণের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময় বিতরণের জন্য গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় উথুলী খাদ্য গুদাম থেকে বরাদ্দকৃত ১৩. ২ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়। উত্তোলিত চাল থেকে ১১ মেট্রিক টন বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। বাকি ২ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, শনিবার সকাল ১১ টায় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে যথারীতি চাল বিতরণ শুরু হয়। জনপ্রতি ১০ কেজি হারে বিতরণের কথা থাকলেও বালতির মাপে জনপ্রতি বিতরণ করা হয় ৬ থেকে ৮ কেজি করে। ওজনে কম দেওয়া নিয়ে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চাল বিতরণ অনিয়মের খবর পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশনা প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
পিআইও তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। অনিয়মের সত্যতা মিললে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি চাল বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে সুবিধাভোগীদের তোপের মুখে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে চাল বিতরণে বাধ্য করেন ইউপি চেয়ারম্যানকে।
ইন্তাজগঞ্জ খালিশা গ্রামের আলম বলেন, ১০ কেজির কথা কইয়া দিতাছে ৬ কেজি, ৭ কেজি ও ৮ কেজি কইরা। বালতির মাপতো, একেক সময় একেক রকম ওঠে। গন্ডগোল হওয়ার পর ১০ কেজি কইরা দিতাছে। পিআইও সাহেব আসার পরে আমরা ১০ কেজি কইরা পাইতাছি।
৮০ বছর বয়সী বিধবা কমলা কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী মইরা গেছে, এদিক সেদিক কাম কাজ কইরা খাই। চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমারে এখনো বিধবা ভাতার কাট (কার্ড) দেয় নাই।
আরেক ভুক্তভোগী জানান, মেম্বার চেয়ারম্যানের হাতে পা ধরেছি, তবু চাইলের কার্ড পাই নাই। পরে এমপি সাহেব আমারে কার্ড দিছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার সংসারে তিনজন মানুষ। এখনো আমারে বিধবা ভাতা কার্ড দেয় নাই। আমি এই অনিয়মের বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন মানিক বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। বিধায় চাল আনতে গোডাউনে যেতে পারিনি। ইউপি সদস্য মান্নানকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি চাল উঠিয়েছেন।
অনিয়মের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি চাল বিতরণের জন্য শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় পরিষদে আসি। দেখি মান্নান মেম্বার পরিষদে নাই। আধাঘন্টা অপেক্ষার পর তাকে ফোন করলাম। ফোনে সে আমাকে উত্তর দিল যে, বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করেছি। যানবাহন সংকটের কারণে ২ মেট্রিক টন চাল আনতে পারেনি। অপেক্ষা করুন!চাল নিয়ে আসতেছি। আমি আর বেশি কিছু জানিনা।
উথুলী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) বলেন, গত বৃহস্পতিবার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩.২ মেট্রিক টন চাল গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুদেব কৃষ্ণ বলেন, এধরনের অনিয়মে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হতদরিদ্রদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনিয়মের খবর পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে আসি। এসে জানতে পারি উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ১৩.২ মেট্রিক টন চালের স্থলে ১১ মেট্রিক টন রিসিভ করেছেন। বাকি ২ মেট্রিক টন চাল কম হওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।