সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙালেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মুখে একে একে পানি তুলে দিয়ে সাত দিন পর অনশন ভাঙান তিন।
এর আগে বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই সাবেক শিক্ষক প্রায় দুই ঘণ্টা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন।
পরে সাংবাদিকদের সামনে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ, আজকে অনশন ভাঙবে। আমি চাচ্ছিলাম এখনি ভাঙাতে; কিন্তু তোমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভাঙবে। তোমরা কথা দিয়েছ তো? ঠিক করে বল? এ সময় শিক্ষার্থীরা তাতে সায় দিয়ে বলেন- ‘জি স্যার’।
জাফর ইকবাল বলেন, শোন তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ? তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ! বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না। তবে তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা আমরণ অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার। এরইমধ্যে শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমাধান করতে কয়েকদফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়। এসময় ভিসি তার বাসভবনে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকলেও পদত্যাগের বিষয়ে কোন সাড়া দেননি। শিক্ষার্থীরাও তাদের আন্দোলনে অনড় আছেন। এমনকি বুধবার অনশন ভাঙলেও তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।