রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরঝিকড়ি গ্রামে সতীনের ছেলেকে বিষ দিয়ে হত্যার ঘটনার ১৪ বছর পর একমাত্র আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২০ হাজার অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার ২০ মার্চ বিকেলে রাজবাড়ীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. জাকিয়া পারভীন এই রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌশুলী (পিপি) উজির আলী শেখ। দন্ডপ্রাপ্ত নারীর নাম আকলিমা আক্তার। তিনি হাটবাড়িয়া গ্রামের আক্কাস আলীর মেয়ে। তার স্বামীর নাম হযরত আলী। হযরত আলী বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১০ আগস্ট পাংশা থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত শিশুর বাবার স্ত্রী দুইজন। প্রথম স্ত্রীর নাম রেনু পারভীন। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আকলিমা আক্তার। দুই স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিরোধ ছিল। প্রথম স্ত্রীর সন্তান রিপন শেখ (৪)। ওই দিন সকালে হযরত আলী গরু কেনার জন্য পাংশা উপজেলা চর শাহমীরপুর এলাকায় যান। রিপনের মা (বাদীর প্রথম স্ত্রী রেনু পারভীন) গরুর ঘাস আনার জন্য মাঠে যায়। রিপনের আপন বোন শিরিন আক্তার (৮) চর ঝিকড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ছিল। বাড়িতে হযরতের দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তার ও তার দুই সন্তান ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিপনকে ঘরে থাকা কীটনাশক বোতলের মুটকিতে করে তাকে খাওয়ায় আকলিমা। এতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। ফলে পাড়ার অনেক লোকজন তার বাড়িতে জড়ো হয়। এ ঘটনার আধাঘন্টা পর তিনি বাড়িতে এসে বাচ্চাকে কান্নাকাটি করতে দেখেন। রিপনকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাস করেন। কান্নার বিষয় নিয়ে কেউ স্পস্ট করে কিছু বলেনি। পরে রিপনের মুখ হতে বিষের গন্ধ বের হওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন বিষক্রিয়ার কারনে সে কান্নাকাটি করছে। তখন শিশুটিকে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিপন বিকেল ৪টার দিকে মারা যায়।এঘটনার পর আকলিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বিষ খাওয়ানোর কথা স্বীকার করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে পাংশা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। কয়েকবছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান মামলার একমাত্র আসামী। এরপর দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শুনানী ও স্বাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত রায় ঘোষণা করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌশুলী (পিপি) উজির আলী শেখ বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন মামলার একমাত্র আসামী।আদালতের রায় ঘোষণার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে আসামীকে পুলিশের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।