গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গোপন নিলামের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে রাস্তার গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ওই ইউনিয়নের ৯ জন সদস্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। ইউপি সদস্যের দাবী দায়সারা ভূয়া নিলামের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর আগে উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের “হরিনাবাড়ী সমাজ কল্যাণ সংস্থা” নামের একটি সমিতি অত্র ইউপির কয়েকটি রাস্তায় গাছ রোপন করে। রাস্তাগুলো হচ্ছে গোবিন্দগঞ্জ ডিসি রাস্তার হরিনাবাড়ী বাজার হতে হরিনাথপুর দেওয়ানের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই রাস্তার পাকা বেড়ার বাসা হতে হরিনাথপুর পিয়ারের ভিটা, হরিনাবাড়ী মধ্যপাড়া ছামছুলের বাড়ী হতে আজাদ পুলিশের বাড়ী ও হরিনাথপুর আব্দুল আজিজের বাড়ী হতে ভেলাকোপা বাল্লির ভিটা পর্যন্ত কয়েক হাজার গাছ লাগান। এরমধ্যে গাছগুলো মূল্যবান হয়ে উঠেছে। গাছ কর্তন কমিটির আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীর গোপন নিলামের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩৭৭টি ইউক্লিপটার্স বিক্রি করে। ওই বিষয়ে ইউপি সচিব মোছা. শাহানা আক্তারের নিকট গাছ কর্তনের সঠিক কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, গাছ কর্তনের কোনো কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদে নেই। সব কাগজপত্র চেয়ারম্যানের কাছে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান দুরভিসন্ধি মূলক মূল্যবান গাছগুলো গোপন নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করার পর গত ২০/০১/২০২৪খ্রি. তারিখের স্মারক নং-গাই/পলাশ/ইউপি-হরি/গাছ কর্তন/২০২৪/১৩ গাছ কর্তনের কার্যাদেশ প্রদান করেন। গাছ কর্তন কমিটির আহবায়ক ও হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীর দায়সারা গোছের প্রচার বিহীন গোপনে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে নিলাম সম্পন্ন করেন। চেয়ারম্যানসহ তাঁর সহযোগীদের যোগসাজশে হরিনাবাড়ী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতির নিকট আত্মীয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদের মালিকাধীন মেসার্স হাবিব ‘ছ’ মিলের বিপরীতে গাছগুলোর নিলাম সম্পন্ন দেখানো হয়। পরে চেয়ারম্যানের অনৈতিক পরামর্শ মোতাবেক কাঠ ব্যবসায়ী গ্রæপ তড়িঘড়ি করে গাছগুলো কেটে সাবাড় করছেন। চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা।
এদিকে; সচেতন মহলের অভিমত স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা গাছগুলো ৫৬ লাখ টাকায় ক্রয় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গাছের নিলাম সর্ম্পকে তারা কিছুই জানেন না। পরবর্তীতে শুভঙ্করের ফাঁকির ন্যায় নামমাত্র সাড়ে ২৯ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে নিলাম সম্পন্ন করা হয়। গাছ কর্তন কমিটির আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীরসহ জড়িত সংশ্লিষ্টরা পরস্পর যোগসাজসে মূল্যের এহেন আকাশ-পাতাল তারতম্যের অবিশ্বাস্য কান্ডটি ঘটিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গাছকাটার অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে ইউনিয়নবাসির অভিমত। ইউপি চেয়ারম্যানের গাছ কর্তনের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে; গাছ বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীরের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ইউপি সদস্যের সাথে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটি ঘটেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, সরকারি নিয়মনীতি, বিধি-বিধান মেনেই গাছের নিলাম দরপত্র সম্পন্ন করা হয়েছে।
সচেতন মহলের প্রশ্ন ফরেস্ট অফিসার রহস্যজনক ভাবে পরিকল্পিত চেয়ারম্যান ও তাঁর নিজ স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি মূল্য এত কম নির্ধারণ করেছেন এবং ব্যাপক ঢোলশহরত প্রচার প্রচারনা করা হয়নি। বিষয়টি যাই-ই হোক না কেন? গাছগুলোর স্থানীয়ভাবে ৫৬ লাখ টাকা দর উঠেছিল। এমন এক প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান কবির হোসাইন জাহাঙ্গীর বিব্রতবোধসহ দায়সারা উত্তরসহ নিরব থাকেন।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.এইচ.এম শরিফুল ইসলাম মন্ডল সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সরকারি নিয়য় অনুযায়ী গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান-এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ওই ইউনিয়নের নির্দিষ্ট একটি লোকেশনে গাছ বিক্রয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই মোতাবেক গাছ কর্তনের একটি অনুমতি দেয়া হয়। উল্লেখিত গাছ কর্তনে সরকারি মূল্য বা দরে নিলাম দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। গাছের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন বন বিভাগ। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।