সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছেই। অনশনের তৃতীয় দিনেও শুক্রবার দাবির বিষয়ে কোনো যৌক্তিক সমাধান আসেনি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুক্রবার বসতে চাইলেও এখনও তা সফল হয়নি।
এদিকে প্রচণ্ড শীতে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না বলে শুক্রবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠান। শুক্রবার বেলা একটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিন দফা ও উপাচার্যের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার রাতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনকে গত বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পদত্যাগ না করায় ওই দিন দুপুরের পর তাঁর বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ২৪ জন ছাত্রছাত্রী। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অনশন চলছিল। তবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৪ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর বাইরে অনশনকারী এক ছাত্রের বাবা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়িতে গেছেন তিনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের কেউ অনশন ভাঙেননি। তাঁরা আবার কর্মসূচিতে যোগ দিতে চান। সব মিলিয়ে ৯ জন এখনো অনশন করছেন। তবে তাঁদের শারীরিক অবস্থাও ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাঁরা জ্বর ও নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন। সবার শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। তবে অনশন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
এরই মধ্যে শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শিক্ষামন্ত্রী মুঠোফোনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সাদিয়া আফরিনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দীপু মনি শিক্ষার্থীদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে দাবির বিষয়টি সুরাহা করার অনুরোধ জানান।
তবে আন্দোলন ফেলে ঢাকায় যেতেও ইচ্ছুক নন অনশনকারীরা। তাঁরা ভার্চ্যুয়ালি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। এর বিকল্প হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেটে আসার জন্য তাঁরা অনুরোধ করছেন।
সাদিয়াসহ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে তাঁরা এটাই বলতে চান, উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া কর্মসূচি কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা হবে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের (শিক্ষার্থীদের) সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা ভার্চ্যুয়ালি কথা বলতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী আবার আমাকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। তিনি তাঁদের বলতে বলেছেন, “যে অচলাবস্থা হয়েছে, সেটা ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা করে সমাধান সম্ভব নয়।’’ তাই শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আসার জন্য আবার অনুরোধ করতে বলেছেন। যদি তাঁরা ঢাকায় যান, তাহলে বিষয়টা তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করবেন।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে শত শত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন।
সূত্রমতে, শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিক্ষোভ করছেন।