এক যুগে উদ্ধার হয়নি ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী বাজারের একটি সরকারি রাস্তার বেদখলকৃত ভূমি। উল্টো প্রভাবশালী দখলদাররা নিজস্ব সম্পত্তি দাবি করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বহু সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হলেও অধরাই রয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এলাকাবাসীরা জানায়, বর্তমান সরকার অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন ভূমি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অথচ ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রী বাজারের সরকারি এই রাস্তার জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে চরম জনদুর্ভোগ। সীমাহীন ভোগান্তিতি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। জনদুর্ভোগ ও অবৈধ দখল সংক্রান্ত বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দীর্ঘদিন যাবত অবগত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রকাশ্য সংগঠিত এই ভূমি অপরাধের প্রতিকার মিলছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক মজিবর রহমান জানান, আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অবৈধ দখল উচ্ছেদের পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পাল্টে যায় তদন্ত প্রতিবেদনের চেহারা। অবৈধ দখলের চিহ্ন নাই সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ করে তেরশ্রী গ্রামের মৃত ধরণী ঘোষের ছেলে টাবলু ঘোষ ও কতিপয় সহযোগী সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে। পাকা দোকান তুলেছে। ক্রমশ বাড়ছে জনদুর্ভোগ। বিষয়টি আমি নতুনভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি এর সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে ডাবলু ঘোষ বলেন, এগুলো আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি। ভূমি অফিসের কানুনগো তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এখানে অবৈধ দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী বাজার থেকে বড় কুষ্টিয়া পর্যন্ত দুই হাজার ৩৭০ মিটার দীর্ঘ পাকা সড়কটি নির্মাণ করেছে এলজিইডি। ১০ ফুট প্রশস্ত সড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুন মাসে সড়কটির কাজ শুরু হয়। সড়কের জায়গা দখলমুক্ত করতে না পারায় এখনো রাস্তার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
সড়কের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী দেবেশ সরকার বলেন, নির্মাণধীন সড়কের জমির ওপর ঘর থাকায় সেই অংশে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিম পয়লা মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ৩৬ দাগে ২১ ডিং টাবলু ঘোষ, মো. আমজাদ হোসেন, ৩৭ নম্বর দাগে দুলাল হোসেন ও মুন্নাফ নামের তিন-চার জন অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করেছে। জরিপকারী (সার্ভেয়ার) পরিমাপ করেও বিষয়টি সত্যতা পেয়েছে। ঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), মো. মোহছেন উদ্দিন জানান, অবৈধ ভাবে সরকারি জমি-রাস্তা দখল কারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নতুন করে মজিবুর রহমানের আবেদনের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।