‘আমার ঘরের পাশে ভাঙন শুরু হইছে।গাঙে পানির বেগ বাড়লেই ভাঙন আরও বাড়ব।তহোন আর রক্ষা পামু না।আমরা গরিব মানুষ।ঘরবাড়ি গাঙে ভাঙলে যাওনের জায়গা নাই।এভাবেই মনের অজান্তে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো বলছিলেন পদ্মার ভাঙন এলাকার বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। রোববার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়।
একই স্থানে ভাঙন কবলিত পদ্মার তীরে বসে বৃদ্ধ রহমান সরদার বলেন,আমার অনেক জমিজমা-ঘরবাড়ি ছিল।তিনবার ভাঙুনীতে সবকিছু হারায়ে আমি এখন সর্বহারা।এ গ্রামে অন্যের জায়গায় ঠাঁই নিলামএখানেও (নতুনপাড়া) নদীতে ভাইংয়া যাইতাছে।এখানেও যদি নদীতে ভাইংয়া যায়,তাইলে আমরা আর কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, আমাদের দুঃখ বলার মতো কোনো জায়গা নাই।’শুধু রহমান সরদার আর ফাতেমা বেগমই নন।এ রকম শত শত অভিযোগ রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ,কালুখালী ও পাংশা উপজেলার পদ্মাপাড়ের মানুষের।
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কালুখালীর সেনানিবাস এলাকা, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকাসহ পদ্মা পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় নদী শাসন প্রকল্প সম্পন্ন হলে গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ গোটা গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকা নদী ভাঙনের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ।প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার বিভিন্ন গাড়ি ফেরিতে পারাপার হয়। পাশাপাশি লঞ্চে পারাপার হয় হাজার হাজার যাত্রী। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা নদীভাঙন প্রবণ হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সেখানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয় পদ্মায় বিলীন হয় ফেরিঘাটসহ পাশের গ্রামের বহু মানুষের ঘরবাড়ি।দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ২০০ মিটার উজানে অবস্থিত নতুনপাড়া গ্রাম এলাকায় নদীতীর ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে গতকাল ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন গ্রামবাসী অনেকেই।
কালুখালী সেনানিবাস এলাকার আলেয়া বেগম বলেন, সেনানিবাসের যে ঘর উত্তোলন করা হয়েছিল তা আগেই ভেঙে গেছে। এ বছর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বৃদ্ধি পেয়েছে রতনদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা বলেন,সেনানিবাস এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী রিং বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।
বিআইডাব্লিউটিএর উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ্ আলম বলেন, বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর রক্ষায় দৌলতদিয়ায় প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘস্থায়ী নদী শাসন করা হবে।এতে নদী ভাঙনের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরিঘাট,লঞ্চঘাটসহ পাশের বিভিন্ন গ্রাম।প্রকল্প বাস্তবায়ন ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ শুরু করা হবে।রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন,ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।প্রস্তাব পাস হলেই কাজ শুরু হবে।