ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগে রাজবাড়ীতে একটি সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল এলাকাবাসী। জানা গেছে,ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। দুই দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।এ অবস্থায় নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন ঠিকাদার। এদিকে সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (ডিডিআরআইডব্লিউএসপি) আওতায় রাজবাড়ীর পুলিশ লাইন্স আরএন্ডএইচ থেকে কোলারহাট জিসি ভায়া মুলঘর সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সড়কটির দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। কাজের চুক্তিমূল্য বিশ কোটি ৭ লাখ ৭৩২ টাকা। মাদারীপুরের বটতলা নতুন শহরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হামীম অ্যান্ড মিজান (জেভি) কাজের দায়িত্ব পায়। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাজ করছেন দীপক কুমার সেন। ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। সড়কটি উভয় পাশে তিন ফুট করে মোট ছয় ফুট চওড়া করা হবে। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর কাজের মেয়াদ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। তাতে কাজ শেষ হয়নি। আবার চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা কাজী হারুন অর রশিদ, আবু সাঈদ, কবির হোসেন ও আব্দুল আলিম অভিযোগ করেন,সড়কের উভয়পাশে তিন ফুট করে চওড়া করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার তা করেননি। কিছু কিছু জায়গার একপাশে পাঁচ ফুট, আবার অপর পাশে এক ফুট চওড়া করা হয়েছে। কারণ অপর পাশে সমান চওড়া করলে খরচ বেশি পড়বে। ঠিকাদার দীপক একজন এমপির দোহাই দিয়ে কাজে অনিয়ম করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গালাগাল করেন তিনি। গায়েও হাত তোলেন। কবরস্থানের প্রাচীরের তিনটি খুঁটি তিনি ভেঙে ফেলেছেন। স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে বৈঠকে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছিল। সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে এসব খুঁটি উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। ঠিকাদার দীপক কাউকে তোয়াক্কা করেন না। আবার খোয়া আনেন একেবারে নিম্নমানের। হাত দিয়ে ভেঙে ফেলা যায়। আমরা চাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ হোক। রাস্তা উভয়পাশে সমান প্রশস্ত হোক।
আলীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রশীদ মিলন বলেন, দীপক নিয়ম অমান্য করে একপাশে রাস্তা বেশি প্রশস্ত করছিল। সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া খুঁটি উঠিয়ে ফেলায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর আর নতুন করে কাজ শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখার কারণে সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি দীপক কুমার সেন বলেন, দুবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করাসহ সড়কে কাজ চলমান রয়েছে। তার দাবি, সড়কের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। সরকারি ফান্ডের সমস্যার জন্য কাজ হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী বলেন, এ সড়কের কাজের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে। এর আগে দুবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন এই প্রকৌশলী। তৃতীয়বার বাড়ানো মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন,গত বছর কাজের এক অংশে নিম্নমানের খোয়া আনা হয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। এবারও নিম্নমানের কোনো উপকরণ পাওয়া গেলে তা পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।