চলতি বছর হজের প্যাকেজ অনেক বেশি ঘোষণা করায় জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। যা সরকাররের ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রায় সাত লাখ টাকার ঘোষিত হজ প্যাকেজ অন্তত এক লাখ টাকা কমালেও জনগণের কাছে সরকারে ভাবমূর্তি উজ্জল হবে বলে মনে করে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ)। হজের বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়াসহ কয়েকটি বড় খাতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে হজের খরচ কমানো সম্ভব। এ সময় পাশর্^বর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশেও হজ খরচ কমানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ একটি রেস্টুরেন্টে আরআরএফ আয়োজিত ‘ঘোষিত হজ প্যাকেজ-২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে এসেছে। সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরআরএফের সহসভাপতি ও ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার রাশিদুল হাসান। সংগঠনের সভাপতি ও দৈনিক আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলনে হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আরআরএফের সাধারণ সম্পাদক ও নিউ নেশনের সিনিয়র রিপোর্টার কামরুজ্জামান বাবলু ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, হজের বিমান ভাড়া নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। তাই আগামীবার বিমান ভাড়া কিভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবো। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, হজ নিবন্ধনের শেষ তারিখ আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে সব কোটা পূরণ হয়ে যাবে। এটা সত্য হজের প্যাকেজ রেট বেড়েছে। তাই রেট বৃদ্ধির কারণগুলো পর্যবেক্ষণের আহবানও জানান তিনি। হজের প্যাকেজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার দাম বৃদ্ধি, তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতাকে দায়ী করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান হজ প্যাকেজে মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া বৃদ্ধি। তাই বিমানের একচেটিয়া ভাড়া বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশেষ কমিটি গঠনের আহবান জানান তিনি। হাব সভাপতি আশা করেন, বিমানের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রন করা গেলে হজ প্যাকেজের মূল্য কমানো সম্ভব।
সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রাপ্ত কোটা অনুযায়ী এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশী পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন। সে লক্ষ্যে চলতি বছরের হজ প্যাকেজ করা হয়েছে। সরকারিভাবে একটি মাত্র প্যাকেজে ৬ লক্ষ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজ মুল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা । যা গতবারের চেয়ে দেড় লাখ টাকারও বেশি খরচ পড়ছে।
হজের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে য্ওায়ায় বাংলাদেশের হজযাত্রীদের নিবন্ধনে এবার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটছে। অন্যান্যবার হজযাত্রী নিবন্ধন নির্ধারতি সময়রে আগেই হয়ে যেত। কিন্তু চলতি বছরে ৭ বার সময় বাড়িয়েও বাংলাদশের জন্য নির্ধারিত হজযাত্রীর কোটা রোববার পর্যন্ত পূরণ হয়নি। সপ্তম দফায় নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়ছে ৫ এপ্রলি পর্যন্ত। এর মধ্যেও কোটা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের আশংকা, এ বছর কোনো মতে বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ হলেও আগামী বছর নির্ধারিত কোটার অর্ধেক হজযাত্রী পাওয়া যাবে কিনা তেমন সন্দেহও কেউ কেউ করছেন। এদিকে হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) পক্ষ থেকে হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার দেওয়া চিঠিতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে বিমান ভাড়া পুননির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে হাব।