বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদকে ‘একদলীয় ক্লাবে’ পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ওরা (সরকার) দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট কী? এখন যে পার্লামেন্ট তারা তৈরি করেছে এটা কোনো পার্লামেন্ট? একদলীয় একটা ক্লাব তৈরি করেছে। এটা আওয়ামী লীগের ক্লাব।
সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের গেটওয়ে হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচন করে আপনি দেশ চালনার জন্য পার্লামেন্ট তৈরি করবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, তাই না? সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ ভোটই দিতে যায় না। ভোট দিয়ে কি হবে? ভোট তো আমার থাকবে না, আমার ভোট তো অন্যরা নিয়ে যাবে।
এজন্য যতকিছু কারসাজি করা দরকার তারা (সরকার) করেছে। কখনো ১৫৪ জনকে অপ্রতিদ্ব›দ্বী ঘোষণা করে দেওয়া, কখনো যে তারিখে ভোট, তার আগের রাত্রে ভোট নিয়ে নেওয়া, ভোট করে নেওয়া এবং সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাদের পক্ষে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা।
সরকার হটানোর আন্দোলনে ২৭ দফার যে রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে, তাকে বিএনপির ‘স্বপ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেন দলের মহাসচিব।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চয় এটা জনগনের সামনে তুলে ধরব। এটা একটা ড্রিম। ড্রিম ছাড়া কখনো সফল হওয়া যায় না। আমরা স্বপ্ন দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে বলব, এ বিষয়ে সারাদিন ধরে ওয়ার্কশপ করুন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পেশাজীবীদের নিয়ে মতামত নিয়ে আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে পারি, সেজন্য উদ্যোগ নেবেন।
‘বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের’ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে এই রূপরেখা ঘোষণা করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা জিনিসের উত্থান-পতন আছে, সামনে আগানো, পেছানো যাওয়া, সেই টেউয়ের মত। যে টেউ শুরু হয়েছে উত্তাল তরঙ্গের মত, সমুদ্রের মত, এরা ভেসে যাবে। কারণ এদের সাথে জনগণ নাই, জনগণ থাকবে না। আমাদের শেষ কথা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি, সেই ১০ দফার প্রথমেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকার অবৈধ সরকার। সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে
ফখরুল বলেন, একটা তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে সেই সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হব।
হতাশ হবেন না: ১৪ বছর ধরে সরকার পতনের আন্দোলনে সাফল্য না এলেও নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, অনেকের কথায় আমি হতাশার একটু ছাপ খুঁজে পাই। কেন হতাশ হবেন? আমরা তো সাকসেসফুল হচ্ছি, প্রতিটা স্টেপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি জেলে গেছি, আমি একা জেলে যাইনি তো। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলে গেছেন। তাদের মুখে আমি এতটুকু হতাশার ছাপ দেখিনি। কারণ এই লড়াইটা শুধু আমার লড়াই নয়, এই লড়াইটা আমার দেশের লড়াই, এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার, শুধু আমার জন্য নয়, সমগ্র মানুষের জন্য জাতির জন্য।
ফখরুল বলেন, বিএনপি আসলে এক ‘অসম লড়াইয়ের’ মধ্যে আছে। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী। তাদের হাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, তাদের হাতে বন্দুক, তাদের হাতে পিস্তল-গ্রেনেড। অবলীলাক্রমে তারা সেগুলো মারে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়।
আমাদের নয়া পল্টনের অফিসের সামনে মকবুল হোসেনকে (স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা) প্রকাশ্যে গুলি করে মারল। উল্টো মামলা দিল আমাদের সাড়ে চারশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। তার মধ্যে আমান উল্লাহ আমানও এক নম্বর আসামি।
পুরো বিচার ব্যবস্থাও সরকারের ‘দলীয়করণের’ কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমের মুখও বন্ধ করে দিয়েছে। উনারা বলেন, সেলফ সেন্সরশিপ করেন। সেলফ সেন্সরশিপ কেন করে? যারা মালিক, তারা তো বিজনেস হাউজ। তাদেরকে ব্যবসা করতে হয়, তাদেরকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এবং প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজের সঙ্গে একজন করে গোয়েন্দা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী লিখবে, হেডলাইন কোনটা যাবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে না-সব কিছু নির্দেশ করে দেওয়া হয়। এখন আফটার অল মানুষকে তো করে খেতে হবে। সাংবাদিকরা চাকরি করেন, ওটাই তো তাদের আয়-উপার্জন। তাদের তো আকাশ থেকে টাকা এসে পড়ে না, তাদেরকে চাকরি করে খেতে হয়। ওই ঝুঁকি নিতে পারেন না সবসময় যে চাকরি গেলেও আমি আপনার ছোট কথাটা লেখব, সবসময় পারেন না।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহŸায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম হাফিজ কেনেডী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুর রহমান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বক্তব্য দেন।
পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে জিয়া পরিষদের জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের ডা. রফিকুর ইসলাম বাচ্চু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাবের আসাদুজ্জামান চুন্নু, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম তাদের এই আলোচনায় মতামত তুলে ধরেন।