আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে ডান হাতের মুষ্টি বেধে আঙ্গুল দিয়ে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি ৷ (আবু দাউদ, তিরমীযি, মিশকাত হা/২৩১৬; নায়ল ২/৩১৬)।
রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতেন। (আবু দাউদ, হা/১৫০২, বায়হাকী হা/১৮৭)।
এক মুহাজের নারী ইয়ুসায়ারা (রাঃ) তসবীহ গণনার সহীহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, রাসূল (ছাঃ) তাকে আঙ্গুল গুলো মুষ্টি বেধে তসবীহ পাঠের নির্দেশ দেন — এবং এ কথাও বলেছেন, কিয়ামতের দিন তসবীহ গণনার জন্য আঙ্গুলগুলো আল্লাহর কাছে সাক্ষী দেবেন। (আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত ২০২ পৃষ্ঠা)।
‘রাসূল(ছাঃ) আঙ্গুল গুলো মুষ্টি বেধে তসবীহ পাঠের নির্দেশ দেন’ এই প্রসঙ্গে সৌদী আরবের স্থায়ী ফতওয়া বোর্ডের সাবেক প্রধান বলেছেন নবী করিম (ছাঃ) এর অনুসরণের মধ্যে রয়েছে সকল কল্যাণ। (ফতওয়ায়ে আরকানূল ইসলাম)।
কোন দানা বা কংকর কিয়ামতের দিন স্বাক্ষী প্রদান করবে বলে কোন জাল হাদীসও পাওয়া যায় না। বাজারে ‘হাযারী তাসবীহ’ নামে যে তাসবীহ প্রচলিত আছে তা বানোয়াট। (পিস টিভি আলোচক)।
তাসবীহ ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে শুরু করতে হয় ৷ আলবানী বলেন, শারঈ যিকর গণনা এটাই সুন্নাত যা কেবল ডান হাত দিয়ে গুনতে হয়। আর বাম হাত বা দুই হাত একসঙ্গে কিংবা কংকর দ্বারা গণনা সবই সুন্নাত বিরোধী। কংকর দ্বারা এমনকি দানা দ্বারা গণনা করা বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত হয় নি।
তাসবীহ, পূথী বা দানা দ্বারা তাসবীহ গননা :
কংকর, পাথর, পুথি দ্বারা তাসবীহ গণনাকারী রিয়া কারী হিসাবে গণ্য (রিয়া করা অর্থাৎ ছোট শিরক করা)। এবং কংকর, পাথর, পুথি দ্বারা তাসবীহ গণনার পক্ষে যে বর্ণনাগুলো আছে তা জাল ৷ (হাদীস মওযু, জাল, আল বিদউ হা/২১, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৩ এর আলোচনা সনদ সহীহ, মুসনাদে দায়লামী হা/৮৩)।
আমাদের সমাজে দামী পাথর দ্বারা তৈরি তসবীহ দিয়ে যিকর-আযকার করা ব্যাপকভাবে চলছে। অথচ এর কোন সহীহ ভিত্তি নেই।
১। আয়েশা বিনতে সা’দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা রাসূল (ছাঃ) এর সাথে এক মহিলার কাছে প্রবেশ করেন। তখন স্ত্রী লোকটি সম্মুখে কিছু খেজুরের বিচি অথবা কংকর ছিল, যার দ্বারা সে তসবীহ গণনা করছিল। রাসূল (ছাঃ)বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব না, যা এটা অপেক্ষা সহজ বা উত্তম হবে? তা হচ্ছে ——। (তিরমিযী হা/৩৫৬৮, আবু দাউদ হা/১৫০০, মিশকাত হা/২৩১১)।
বিশ্লেষণ: উক্ত বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে খুযায়ামা ও সাঈদ ইবনে আবী হেলাল নামে দুই জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছেন। তাছাড়া এটি সহীহ হাদীসের বিরোধী। কারণ রাসূল(ছাঃ) ডান হাতের আঙ্গুলে তসবীহ গণনা করতেন। (যঈফ আবু দাউদ হা/১৫০০, যঈফ আত তারগীব হা/৯৫৯, সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৮৩)।
২। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যে দানা দ্বারা যিকর করে সে কতই না উত্তম। (দায়লামী, মুসনাদুল ফেরদাউদ ৪/৯৮ পৃষ্ঠা)।
বিশ্লেষণ: বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার প্রত্যেক রাবীই ত্রুটিপূর্ণ ৷ (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।
উক্ত পর্যালোচনার পর আলবানী বলেন, নিশ্চয়ই তাসবীহ দানা বিদ’আত। এটা রাসূল (ছাঃ) এর যুগে ছিল না, বরং তার পরে সৃষ্টি হয়েছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩ এর আলোচনা)।
৩। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করিম (ছাঃ) কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করতেন।(আবুল কাশেম জুরজানী, তারীখে জুরজান হা/৬৮)।
বিশ্লেষণ: বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কুদামা বিন মাযউন এবং ছালেহ ইবনু আলী নামে অভিযুক্ত রাবী আছেন। (সিলসিলাহ যঈফাহ হা/১০০২)।
কংকর বা তাসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করার বিপক্ষে সাহাবীগণ ছিল খড়গহস্ত।
৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এর কাছে কুফার এমন কিছু লোক সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো; যারা মসজিদে ছোট ছোট পাথর একত্রিত করে তা দ্বারা গুনে গুনে তাসবীহ পড়ছিল। অতঃপর তিনি তাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, তাদের প্রত্যেকের সামনেই ছোট ছোট পাথরের এক একটি স্তুপ রয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তাদের পাথর নিক্ষেপ করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। এবং বলেন, তোমরা অবশ্যই একটি বিদ’আত ও অন্ধকারের উদ্ভাবন করছো। জ্ঞানের রাজ্যে মোহাম্মদ(ছাঃ)এর সাহাবীদের চেয়ে তোমরা প্রাধান্য লাভ করেছো? (আল ইতিসাম ২/৩০৮ পৃষ্ঠা ইমাম শাতিবী)
৫। ছালত ইবনে বুহরাম (রাঃ) বলেন ইবনে মাসউদ (রাঃ) এক মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তার কাছে দানা ছিল তা দ্বারা সেই মহিলা তাসবীহ গননা করছিল। ইবনে মাসউদ তাকে পা দ্বারা লাথি মারলেন। তার পর বললেন, তোমরা অগ্রগামী হয়েছো! তোমরাই কি মোহাম্মদ (ছাঃ) এর সাহাবী হিসাবে ইলমের দিক থেকে বিজয় হয়েছ! (ইবনে ওয়াযযাহ, আল-বিদিউ পৃষ্ঠা-২৩, হা/২১, সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৩ এর আলোচনা, সনদ সহীহ)।
৬। ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর ছাত্র বিশিষ্ট তাবেঈ ইব্রাহীম আন-নাখ’ঈ তার মেয়েকে মহিলাদের তাসবীহর সুতা (তা দ্বারা তসবীহ পাঠ করার জন্য) পাকিয়ে দিয়ে সহযোগীতা করতে নিষেধ করেছিলেন। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ২/৮৯/২, যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ, আলবানী হা/৮৩ এর আলোচনা)।
পাথর, পুথি ও দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা যায়েজ করা হয়েছে যেভাবে: সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) এর কাছে একটা সুতা ছিল যাতে দুহাজার গিরা ছিল। তিনি যতক্ষন ঐ গিরা গুলো দ্বারা তাসবীহ না পড়তেন ততক্ষন শুতে যেতেন না। (মুসনাদে আহমাদ) এই বর্ণনা সহ কয়েকটি দুর্বল বর্ণনা একত্রে করে কোন কোন আলেম তাসবীহর ছড়া ব্যবহার কে যায়েজ বলেছেন। তবে তারা আঙ্গুলে তাসবিহ গননাকেই উত্তম বলেছেন।