আল্লাহপাক মুখের লাবণ্যদাতা, সৌন্দর্যের সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবীর সমস্ত লাবণ্য ও সৌন্দর্য, সমস্ত স্বাদ ও আনন্দ এবং সকল সুখ-শান্তি আল্লাহ পাকের নামের মধ্যে নিহিত। আল্লাহপাক বলেন-
اليس الله بكاف عبده
তোমার কাছে যদি কিছুই না থাকে, সুখ ও আরামের কোন সামান,কোন উপকরণই তোমার কাছে না থাকে, তবুও "আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য অবশ্যই 'যথেষ্ট' নন?”
যদি কারো স্ত্রী মারা গিয়ে থাকে, কারো সন্তানাদি না থাকে, মা-বাপ না থাকে, মাল-দৌলত না থাকে, রাজত্ব বা নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব না থাকে, কিন্তু সে যদি তসবীহ হাতে নিয়ে আল্লাহপাকের নাম যপা শিখে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তার জন্য যথেষ্ট। কারণ, দুনিয়ার সমস্ত নেআমত, সমস্ত লহতে এবং সুখ-শান্তির সমস্ত আসবাব উপকরণাদির সৃষ্টিকর্তা তো আল্লাহ।
অতএব, যার অন্তরকে আল্লাহপাক স্বীয় খাছ নৈকট্য ও
সান্নিধ্য দানে ধন্য করেন, সেই দিলের উপর আল্লাহপাকের ঐ খাছ হেতের (খাছ নামের) তাজাল্লীও নাযিল হয় যেই নামের বরকতে সমস্ত জাহানের নেআমত, লযযত ও সুখ-শান্তির অস্তিত্ব লাভ হয়।
তাই, যেই দিলে আল্লাহপাক থাকেন, সেই দিল সর্বদা সমস্ত জাহানের সুখ-শান্তি এবং সকল স্বাদ ও আনন্দের অধিকারী থাকে। ফলে, যত স্বাদের জিনিস আছে এবং যত ধরনের নেআমত আছে এই পৃথিবীতে, সবকিছুর মজা ও তৃপ্তি, সবকিছুর মাধুর্য ও প্রাচুর্য নিজ হৃদয়ে সে অনুভব করে।
কিন্তু, তা তখনি সম্ভব হয় যখন অধিক পরিমাণে আল্লাহপাকের নাম নেওয়ার তওফীক হয়। আর বেশি বেশি যিকির করার তওফীক ও এখলাছ অর্জন কোন ওলীর সম্পর্ক ও সংস্পর্শের উপরই নির্ভরশীল ।
সারকথা হলো, আল্লাহপাকের নাম বান্দার জন্য, বান্দার দোজাহানের জন্য যথেষ্ট। দেখুন, আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলছি না, বরং আমি তো পবিত্র কোরআনের আয়াত পড়ছি এবং এর তরজমা শুনাচ্ছি। আল্লাহ স্বয়ং বলছেনঃ
اليس الله بكاف عبده
“আল্লাহ কি যথেষ্ট নন তার বান্দার জন্য?"
অবশ্য, এই পয়গাম তার জন্য যাকে আল্লাহপাক তওফীক ও বিবেক দ্বারা ধন্য করেন। শুধু জানা যথেষ্ট নয়, শুধু শোনা যথেষ্ট নয়। এসব কথা শুনলে বা জানলেই যে সফলকাম হয়ে যাবে, তা নয়- যতক্ষণ না আল্লাহ পাকের দেওয়া তওফীক ও মেহেরবানী তার সাথী না হয়।
অনেক বাবুর্চি আছে যারা বিরিয়ানীর দোকান খুলেছে, রোজ এখ্নি-বিরিয়ানী তৈরি করে দিচ্ছে। শত শত লোক তা খাচ্ছে এবং খুব মোটা-তাজা হচ্ছে। কিন্তু
হতভাগা বাবুর্চি তা থেকে কিছুই খায় না, পান করে না। একই অবস্থা ঐ ব্যক্তির যে ওয়াজ করে, বুযুর্গানেদ্বীনের বাণী ও উপদেশাবলী নোট করে, প্রচার করে, কিন্তু নিজে সেই মোতাবেক আমল করে না। অন্য লোকেরা তার লেখা মালফুযাত ও উপদেশাবলী পড়ে পড়ে এবং তদনুযায়ী আমল করে ‘ছাহেবে-নেছ্বত' 'ওলীআল্লাহ হচ্ছে। অথচ, সে নিজে আল্লাহ থেকে বঞ্চিত। পাপের ঘনকালো মেঘমালার আবরণে তার 'নেছবত' ও ‘বেলায়েতের' চাঁদ ঢাকা পড়ে আছে।
আল্লাহপাক যতটুকু এলম দান করেছেন, যতটুকু জানার তওফীক দিয়েছেন, ততটুকুর উপর আমল করে
দেখুন । কুদৃষ্টি যে গুনাহ, তা তো জানা আছে। কিন্তু, এই জানাই যথেষ্ট নয় বরং কুদৃষ্টি থেকে বাঁচতে হবে। তখন এই এলেম আমলে পরিণত হবে। এল্মের উপর আমল করুন এবং আমলের মধ্যে এখলাছ ঢেলে দিন। তারপর দেখুন, কী অর্জিত হচ্ছে! কারণ, লোক দেখানোর জন্য আমল করলে তা কবূল হয় না। আর এই আমলের তওফীক ও আমলের মধ্যে এখলাছ অর্জন হয় আল্লাহর ওলীদের সোহবতে গেলে। আল্লাহর
ওলীদের সোব্বত (বা সঙ্গ লাভ) ব্যতীত কাজ হয়-ই না। যিন্দেগী বনেই না। কামিয়াবী হাতে আসেই না ।
???? আসমানে আকর্ষণ ও আকর্ষিত বান্দাদের ঘটনাবলী ||| পৃষ্ঠাঃ ৩৯,৪০,৪১