১
কুরবানী করার ব্যাপারে নিয়তকে এখন থেকে বারবার ঝালাই করতে থাকা চাই। পূর্ববর্তীরা এমনটি ই করতেন। গোশত খাওয়ার জন্য কোরবানি দিব না। কোরবানি দিব স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে সকল শরীকের নিয়ত সহীহ হতে হবে খাঁটি হতে হবে। একজনের নিয়তও যদি এখলাছ পরিপন্থী হয় তাহলে সকলের কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে।
২
কুরবানীর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ কুরবানীর জন্য নিয়ত করা প্লান করা থেকে শুরু করে গোশত খাওয়া গোশত বিতরণ করা পর্যন্ত সময়ের ভিতর এই চিন্তা মাঝেমধ্যে করা যে, আমি তো পশু কুরবানী করতেছি/করলাম কিন্তু আমার নফসের(মনের) হারাম খায়েশাত(কুদৃষ্টি গীবত হিংসা অহংকার কুধারণা কৃপণতা ইত্যাদি) কি আমি কুরবানি করতে পেরেছি? এবং সঙ্গে সঙ্গে এ চিন্তা করা যে, আমি ঐ সকল বৈধ চাহিদাকে কুরবানী করতে পেরেছে কিনা, যা করতে পারলে আল্লাহ তা'য়ালার সাথে আরও মজবুত সম্পর্ক গড়া সম্ভব।
৩
হালাল উপার্জন দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করতে হবে।
কুরবানীর শরীক নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী।
যাদের সম্পূর্ণ ইনকাম হারাম অথবা অর্ধেকের বেশি ইনকাম হারাম, তাদেরকে কুরবানীর শরীক নির্বাচন করা যাবে না।
৪
অনেকের অভ্যাস একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করে, আপনার কুরবানীর পশু কত টাকা দিয়ে কিনেছেন? এসব অনর্থক কথা থেকে আমি নিজের জবানকে বাঁচাবো ইনশাআল্লাহ। এসব কথা আলোচনার দ্বারা দিলের ভিতর অহংকার তৈরির আশঙ্কা থাকে অনেকের ক্ষেত্রে।
৫
পূর্ববর্তী বছরগুলোতে কত টাকা দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করেছিলাম, এ নিয়ে মানুষের সঙ্গে আলোচনা করব না। এসব আলোচনার দ্বারা দিলের ভিতর বড়াই তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এসব আলোচনার দ্বারা অনেক সময় পূর্ববর্তী সেই কুরবানীর নেকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নাউজুবিল্লাহ
৬
কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর তার সেবা-যত্ন করা চাই। পানাহারের ব্যাপারে কুরবানীর পশুর যাতে কোনো রকম কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা চাই। কোরবানির পশু ক্রয় করার পর তার যথাযথ যত্ন, খাবার পানি বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
কোরবানির পশু রাখার স্থানে যদি মশা থাকে, সেক্ষেত্রে কয়েলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭
ধারালো ছুরি দিয়ে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। অন্য পশুর আড়ালে কুরবানীর পশু জবাই করতে হবে।
৮
কোরবানির পশু জবাইয়ের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি না করা চাই, ভিডিও না করা চাই।
কোরবানির পশুর ছবি বা ভিডিও আপলোড করা যাবে না।
৯
কোরবানি শেষে রক্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবো এবং ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিব। অন্যথায় কয়েকদিন পর প্রচন্ড বাজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এতে লোকজনের অনেক বেশি কষ্ট হয়। লোকজন নাক মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
আমার কুরবানীর পশুর জবাইকৃত রক্ত থেকে সৃষ্ট প্রচন্ড দুর্গন্ধের দ্বারা যেন কেউ কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
১০
কোরবানির পশু জবাই করা এবং গোশত বানানোর ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করবে তাঁদেরকে শ্রমের মূল্য দিয়ে দিব। কুরবানীর পশু থেকে কোনো কিছু দিব না। তবে হ্যাঁ যথাযথ পারিশ্রমিকের মূল্য দেওয়ার পর তাদেরকে গোশত দেয়া যাবে।
১১
কুরবানীর গোশত বণ্টনে সামাজিক ভাগ এর সিষ্টেম একটি কু-প্রথা। এ প্রথা বর্জন করা উচিত।
১২
কোরবানির গোশত গরিব মিসকিন কে খুশিমনে দান করব ইনশাআল্লাহ।
১৩
কুরবানীদাতা কতৃক কোরবানির পশুর চামড়া বিনা ওজরে বিক্রি না করা চাই।
কুরবানীদাতা কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করবে অথবা দান করে দিবে, বিক্রি করবে না।
নবীজী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি নিজ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করবে তার জন্য কোনও কুরবানী নেই।"[মুস্তাদরাকে হাকিম 3525, সুনানে বাইহাকী 19233, আল জামি' 6118, তারগীব 1088]
মুফতী মনসূরুল-হক দাঃ বাঃ বলেন, কুরবানির পশুর চামড়া কুরবানি দাতা কতৃক বিক্রি করা মাকরূহ , যা এক ধরনের নাজায়েয। মাসআলা হচ্ছে কুরবানির পশুর চামড়া কুরবানি দাতা নিজে ব্যবহার করতে পারে, অন্যথায় তা গরীবকে দান করে দিবে, তখন সেই গরীব লোক এটা নিজে ব্যবহার বা বিক্রি করতে পারবে।
১৪
কোরবানির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা চাই। এভাবে বলতে থাকা, "ইয়া আল্লাহ, এই কুরবানীর মধ্যে আমার পক্ষ থেকে যত ত্রুটি হয়েছে, তা মাফ করেন এবং আপনার শান মোতাবেক কবুল করেন।"
আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর আমলের ভরপুর তৌফিক দান করেন। আমীন