মহান মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন-জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। পরে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা করে কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে পৌঁছান। মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শ্রমিক দলের নেতারা তাতে অংশ নেন।
এসময় বক্তব্যে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শ্রমিকদের রাজপথে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শোভাযাত্রার এক সমাবেশে ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে’ ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান ধরে তিনি বলেন, আসুন এই স্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে সরকার জোর করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা আজকে শ্রমিকশ্রেণিসহ সকল মানুষের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে সমাবেশ করতে পারেন না, আপনারা ইচ্ছা করলে ইউনিয়ন করতে পারেন না। আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আসুন আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করি, দেশের সমস্ত শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করি। দেশে বরাবরই শ্রমিকরা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমাদের অতীতে যে গৌরবময় আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শ্রমিকরা।
শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু এখানে বসে স্লোগান দিলে হবে না। আপনাদেরকে রাজপথে স্লোগান দিতে হবে এবং জনগণকে সংগঠিত করে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে আকাশচুম্বি। চালের দাম বেড়েছে ১০ গুনের মতো, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়েছে। আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কি যে কষ্টের মধ্যে আছেন, তা আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন। সেই কষ্ট সরকারের কানে যায় না। তারা ন্যায্য মূল্যে শ্রমিকদেরকে চাল-ডাল-তেল দিতে পারে না।
তারা বড়লোকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করে, কিন্তু গরিব মানুষদের জন্য কোনো হাসপাতাল তৈরি হয় না। শ্রমিকরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা পায় না, তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পায় না। সব কিছু থেকে এদেশের শ্রমিক শ্রেণি বঞ্চিত। আজকে বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কথা, বড় বড় মেগা উন্নয়নের কথা সরকার বলে, কিন্তু একই সঙ্গে শ্রমিক ভাইদের জন্য তারা কোনো কিছু করে নাই।
এ দেশের জনগণ বর্তমান সরকারকে ‘সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে’ বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারের সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। শ্রমিক শ্রেণির কোনো সম্পর্ক নাই… এই রাষ্ট্রকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রম বিষয়ক সহ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দল ও দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির উদ্যোগে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে ‘গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার’ নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহযোগিতা দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।