সদকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর আদায়ের দুটি সময় রয়েছে: ১. ফযীলতপূর্ণ সময় ও ২. জায়েয সময়।
ফযীলতপূর্ণ সময়: ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাতের পূর্বে। কারণ;
* সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ»
‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় যাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের দিনে এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য আদায় করতাম।’[বুখারী: ১৫১০।]
অনুরূপভাবে বুখারীতে ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ، أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ঈদের সালাত পড়তে যাওয়ার পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ নিয়েছেন।’[বুখারী: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৬।] অনুরূপভাবে হাদিসটি ইমাম মুসলিম ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।
ইবন ‘উয়াইনা স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে ‘আমর ইবন দীনারের সূত্রে ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মানুষ ঈদের দিন যাকাতুল ফিতর ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ١٤ وَذَكَرَ ٱسۡمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ ١٥ ﴾ [الأعلى: ١٤، ١٥]
‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর সালাত আদায় করে।’ (সূরা আ‘লা, আয়াত: ১৪-১৫)
সুতরাং ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্ব করে পড়া উত্তম; যাতে মানুষ যাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে।
জায়েয সময়: ঈদের একদিন দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করা।
* সহীহ বুখারীতে নাফে‘ বর্ণনা করেন, ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের এবং ছেট-বড় সন্তানদের পক্ষ হতেও যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। এমনকি তিনি আমার সন্তানদের যাকাতুল ফিতরও প্রদান করতেন। তিনি যারা যাকাতুল ফিতর গ্রহণ করত তাদেরকেই প্রদান করতেন। আর তারা ঈদের একদিন বা দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর দিতেন।[বুখারী: ১৫১১।]
ঈদের সালাতের পর আদায় করা জায়েয নেই। তাই বিনা কারণে সালাতের পর পর্যন্ত বিলম্ব করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না কারণ তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের পরিপন্থী।
* পূর্বে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ»
‘ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’[আবু দাউদ: ১৬০৯; ইবন মাজাহ: ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪০৯।]
আর যদি কোনো সঙ্গত কারণবশত বিলম্ব করে, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। যেমন সে এমন স্থানে আছে যে তার কাছে আদায় করার মত কোনো বস্তু নেই বা এমন কোনো ব্যক্তিও নেই, যে এর হকদার। অথবা হঠাৎ তার কাছে ঈদের সালাতের সংবাদ পৌঁছল যে কারণে সে সালাতের পূর্বে আদায় করার সুযোগ পেল না অথবা সে কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিল, আর সে আদায় করতে ভুলে গেছে। এমতাবস্থায় সালাতের পর আদায় করলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ সে অপারগ।
ওয়াজিব হচ্ছে, যাকাতুল ফিতর তার প্রাপকের হাতে সরাসরি বা উকিলের মাধ্যমে যথাসময়ে সালাতের পূর্বে পৌঁছানো। যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে প্রদানের নিয়ত করে, কিন্তু যাকাতুল ফিতর বের করার সময় তার সঙ্গে বা তার কোনো ওকিল বা প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ না ঘটে তাহলে অন্য কোনো যাকাতুল ফিতরের উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবে। কোনো ক্রমেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্ব করবে না।