শিরোনাম
  • ফের যে আসন থেকে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইসরায়েল কে এই নতুন মেসি-ইয়ামাল? ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে যা বললেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে যে নতুন নির্দেশনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আলুর দাম নিয়ে যে দুঃসংবাদ শোনালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ নিয়ে যা জানালেন আইনজীবী শিশির মনির নির্বাচন নিয়ে নতুন যে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সরকার নির্বাচন নিয়ে চাপ দিলে পদত্যাগ করবো: সিইসি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
  • সদকাতুল ফিতরার বিস্তারিত তথ্য

    উইকিপিডিয়া

    ১ মে, ২০২২ ০১:০২ অপরাহ্ন

    সদকাতুল ফিতরার বিস্তারিত তথ্য

    ফিতরা বা ফেতরা(فطرة) আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন।[১]আল মুজাম আল ওয়াসিত, পৃষ্ঠা ৬৯৪ ] যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের যাকাত বলা হয়।[ফাতহুল বারী ৩, পৃষ্ঠা ৪৬৩]

    যাকাতুল ফিতরের বিধান বা হুকুম:

    যাকাতুল ফিতর প্রদান করা ফরয। এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মুসলিমের উপর অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর রাসূল যা ফরয করেছেন অথবা করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন সেগুলোও যা আল্লাহ ফরয করেছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন তার হুকুম রাখে। অর্থাৎ তা মানাও অবশ্যম্ভাবী।

    * আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء: ٨٠]

    ‘যে রাসূলের হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে তা থেকে বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাই নি।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০)

    * আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

    ﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [النساء: ١١٥]

    ‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকে ফিরাবো যে সে ফিরতে চায় এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। তা নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫)

    * আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر: ٧]

    ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭)

    আর যাকাতুল ফিতর মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, স্বাধীন-কৃতদাস সকলের ওপর ফরয।

    * আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

    «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَالحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ»

    ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের ওপর এক সা‘ খেজুর, বা এক সা‘ যব যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন।’[ বুখারী: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৪।]

    * পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু কেউ যদি আদায় করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ,

    * ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পেটের বাচ্চার পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করতেন।

    ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং যাদের ভরণ-পোষণ তার দায়িত্বে রয়েছে যেমন-স্ত্রী ও এমন নিকটাত্মীয় যাদের নিজেদের ফিতরা নিজেদের দেওয়ার সামর্থ নেই সন্তান তাদের পক্ষ থেকেও আদায় করা আবশ্যক। আর যদি তারা নিজেদের ফিতরা নিজেরা দেওয়ার সামর্থ রাখে তবে নিজেদের যাকাতুল ফিতর নিজেরাই আদায় করা উত্তম। কারণ ওয়াজিব হওয়ার সম্বোধন তাদেরকেই মৌলিকভাবে করা হয়েছে।

    আর যাকাতুল ফিতর কেবল তাদের উপরই আবশ্যক যার ঈদের দিন ও রাত্রের খরচ সম্পাদনের পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকবে। যদি এক সা‘ এর চেয়ে কম পরিমাণ সম্পদও কারও অতিরিক্ত থাকে তবে তাকে তা-ই যাকাতুল ফিতর হিসেবে প্রদান করতে হবে। কারণ,

    * আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : ﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]

    ‘তোমরা সাধ্য অনুপাতে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬)

    * অনুরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «َإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ»

    ‘আমি যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে আদেশ করি, তোমরা তখন তা সাধ্যানুযায়ী পালন করো।’[ বুখারী:৭২৮৮;মুসলিম: ১৩৩৭।]

    যাকাতুল ফিতর প্রবর্তনের হিকমত বা রহস্য:


    বস্তুত: যাকাতুল ফিতরের হিকমত অত্যন্ত স্পষ্ট। কারণ:

    এর দ্বারা দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সদয় ব্যবহার করা হয়; যাতে তারা ঈদের দিনে ভিক্ষা করা থেকে বিরত থেকে ঈদের দিনগুলোতে ধনীদের সাথে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে; ফলে ঈদ হবে সার্বজনীন। তাছাড়া এর মধ্যে বদান্যতা ও সহমর্মিতার মত মহৎ চরিত্র দ্বারা গুণান্বিত হওয়া যায়। চওয়ার প্রয়োজন না হয়

    সিয়াম পালনকারীর সিয়ামে যে শৈথিল্য বা ত্রুটি-বিচ্যুতি ব গুনাহ হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারীকে তা থেকে পবিত্র করা যায়।

    যাকাতুল ফিতর আদায়ের দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ দয়ায় বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তাওফীক দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কিয়ামেরও সুযোগ দিয়েছেন এবং এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব কিছু সৎ কাজেরও সুযোগ দিয়েছেন।

    * আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

    «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ»

    ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথা-বার্তা দ্বারা সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকীনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’[আবু দাউদ: ১৬০৯; ইবন মাজাহ: ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪০৯।]

    যাকাতুল ফিতরের শ্রেণী বিভাগ:

    মানুষের সাধারণ খাদ্য জাতীয় বস্তু; যেমন-খেজুর, আটা, চাল, কিসমিস, পনির ইত্যাদি। অথবা এর বাইরে সাধারণত যা মানুষের খাদ্য হিসেবে পরিগণিত তাও দেওয়া যাবে।

    * বুখারী ও মুসলিমে ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ »

    ‘রাসূলুল্লাহ সা. যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন, খেজুর অথবা যব থেকে এক সা‘ পরিমাণ।’[ বুখারী: ১৫০৩।]

    আর ওই যুগে তাদের খাদ্য ছিলো যব।’ যেমন,

    * আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ» ، وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ»

    ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় আমরা যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা‘ খাদ্য দ্বারা। তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির এবং খেজুর।’[বুখারী: ১৫০৮; মুসলিম: ৯৮৫।]

    অতএব, পশুর খাদ্য দ্বারা যাকাতুল ফিতর আদায় করলে, আদায় হবে না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসকীনদের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন জীব-জন্তুর খাদ্য হিসেবে নয়।

    তাছাড়া কাপড়, বিছানা-কার্পেট, পানপাত্র, খাদ্য-রসদ ইত্যাদি যা মানুষের খাদ্য বলে বিবেচিত নয় তা দ্বারা দিলে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য দ্বারা দেওয়া ফরয করেছেন সুতরাং রাসূল যেটা নির্ধারণ করেছেন সেটা অতিক্রম করা যাবে না।

    অনুরূপ খাদ্যের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমেও আদায় করা যাবে না। কারণ,তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদেশের বিপরীত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন:

    «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

    ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের কোনো আদেশ নেই, তা অগ্রহণযোগ্য।’[বুখারী: ৭৩৫০।]

    অপর বর্ণনায় এসেছে:

    «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»

    ‘যে আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করবে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ এটি ইমাম মুসলিম সংকলন করেছেন। তবে এর মূল কথা বুখারী-মুসলিম উভয়টিতেই রয়েছে।’[বুখারী: ২৬৯৭; মুসলিম: ১৭১৮।]

    তাছাড়া খাদ্যমূল্য প্রদান সাহাবীগণের আমলের পরিপন্থী। কারণ, তারা খাদ্যজাতীয় বস্তু দ্বারাই যাকাতুল ফিতর আদায় করতেন।


    * আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

    « عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِّينَ من بعدي»

    ‘তোমরা অপরিহার্যভাবে আমার সুন্নাতকে আকড়ে ধরো এবং আমার পরবর্তীতে সঠিক পথে পরিচালিত ও হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত বা আদর্শ অনুসরণ করে চলো।’[আহমাদ ৪/১২৬,১২৭;আবু দাউদ: ৪৬০৭;তিরমিযী:২৬৭৬;ইবন মাজাহ:৪২, ৪৩।]

    তাছাড়া যাকাতুল ফিতর সুনির্দিষ্ট প্রকার নির্ধারণ করে-দেওয়া ইবাদত। বিধায় তা সুনির্দিষ্ট বস্তুর বাইরে অন্য কিছু দ্বারা আদায় করলে গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমনিভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ের পরে বের করলে তা যথেষ্ট হয় না।

    তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন, আর সে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সমান নয়। সুতরাং মূল্যই যদি ধর্তব্য হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কোনো এক প্রকারের এক সা‘ পরিমাণ নির্ধারিত হতো এবং অন্যান্য প্রকার থেকে একই মূল্যের সমান নির্ধারিত হতো।

    আর মূল্য প্রদান করলে যাকাতুল ফিতর প্রকাশ্য ইবাদাত থেকে পরিণত হয় গোপন ইবাদতে। যেহেতু এক সা‘ খাদ্য প্রদান করলে তা মুসলিমদের মাঝে প্রকাশ্য হয়, ছোট-বড় সকলেই তা জানতে পারে, স্বচক্ষে তার পরিমাপ ও বণ্টন দেখে এবং তারা পরস্পর তা গ্রহণ করে। কিন্তু মূল্য হলে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে তা গোপনে আদান-প্রদান হয়ে যায়।

    যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ:

    যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের এক সা‘। যার ওজন: উন্নত মানের গমের চার শত আশি মিসকাল গম। আর গ্রামের ওজনে ‘দুই কেজি ৪০ গ্রাম’ গম। যেহেতু এক মিসকাল সমান সোয়া চার গ্রাম, তাই ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম।

    অতএব রাসূলে যুগের সা‘ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা দ্বারা পরিমাপ করতে হবে।

    যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়:

    ঈদের রাতে সূর্যাস্তের সময় জীবিত থাকলে তাদের ওপর যাকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক; নতুবা নয়।

    সুতরাং কেউ সুর্যাস্তের এক মিনিট পূর্বে মারা গেলে তার ওপর ওয়াজিব হবে না।

    আর এক মিনিট পরে মারা গেলে অবশ্যই তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।

    যদি কোনো শিশু সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পর ভূমিষ্ট হয়, তার ওপরও আবশ্যক হবে না। তবে আদায় করা সুন্নাত হবে।

    আর সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে ভূমিষ্ট হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।

    যাকাতুল ফিতর আবশ্যক হওয়ার সময় রামযানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পর এজন্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে, তখন থেকে ফিতর তথা খাওয়ার মাধ্যমে রমযানের সিয়াম সমাপ্ত হয়। এ কারণেই একে রমযানের যাকাতুল ফিতর বা সিয়াম ভাঙ্গার যাকাত বলা হয়। এতে বুঝা গেল যে, ফিতর তথা সিয়াম শেষ হওয়ার সময়টাই যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়।

    যাকাতুল ফিতর আদায়ের সময়:

    যাকাতুল ফিতর আদায়ের দুটি সময় রয়েছে: ১. ফযীলতপূর্ণ সময় ও ২. জায়েয সময়।

    ফযীলতপূর্ণ সময়: ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাতের পূর্বে। কারণ;

    * সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ»

    ‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় যাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের দিনে এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য আদায় করতাম।’[বুখারী: ১৫১০।]

    অনুরূপভাবে বুখারীতে ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

    «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ، أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ»

    ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ঈদের সালাত পড়তে যাওয়ার পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ নিয়েছেন।’[বুখারী: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৬।] অনুরূপভাবে হাদিসটি ইমাম মুসলিম ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।


    ইবন ‘উয়াইনা স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে ‘আমর ইবন দীনারের সূত্রে ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মানুষ ঈদের দিন যাকাতুল ফিতর ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

    ﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ١٤ وَذَكَرَ ٱسۡمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ ١٥ ﴾ [الأعلى: ١٤، ١٥]

    ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর সালাত আদায় করে।’ (সূরা আ‘লা, আয়াত: ১৪-১৫)

    সুতরাং ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্ব করে পড়া উত্তম; যাতে মানুষ যাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে।

    জায়েয সময়: ঈদের একদিন দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করা।

    * সহীহ বুখারীতে নাফে‘ বর্ণনা করেন, ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের এবং ছেট-বড় সন্তানদের পক্ষ হতেও যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। এমনকি তিনি আমার সন্তানদের যাকাতুল ফিতরও প্রদান করতেন। তিনি যারা যাকাতুল ফিতর গ্রহণ করত তাদেরকেই প্রদান করতেন। আর তারা ঈদের একদিন বা দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর দিতেন।[বুখারী: ১৫১১।]

    ঈদের সালাতের পর আদায় করা জায়েয নেই। তাই বিনা কারণে সালাতের পর পর্যন্ত বিলম্ব করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না কারণ তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের পরিপন্থী।

    * পূর্বে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ»

    ‘ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’[আবু দাউদ: ১৬০৯; ইবন মাজাহ: ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪০৯।]

    আর যদি কোনো সঙ্গত কারণবশত বিলম্ব করে, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। যেমন সে এমন স্থানে আছে যে তার কাছে আদায় করার মত কোনো বস্তু নেই বা এমন কোনো ব্যক্তিও নেই, যে এর হকদার। অথবা হঠাৎ তার কাছে ঈদের সালাতের সংবাদ পৌঁছল যে কারণে সে সালাতের পূর্বে আদায় করার সুযোগ পেল না অথবা সে কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিল, আর সে আদায় করতে ভুলে গেছে। এমতাবস্থায় সালাতের পর আদায় করলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ সে অপারগ।

    ওয়াজিব হচ্ছে, যাকাতুল ফিতর তার প্রাপকের হাতে সরাসরি বা উকিলে মাধ্যমে যথাসময়ে সালাতের পূর্বে পৌঁছানো। যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে প্রদানের নিয়ত করে, কিন্তু যাকাতুল ফিতর বের করার সময় তার সঙ্গে বা তার কোনো ওকিল বা প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ না ঘটে তাহলে অন্য কোনো যাকাতুল ফিতরের উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবে। কোনো ক্রমেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্ব করবে না।

    যাকাতুল ফিতর প্রদানের স্থান:

    যাকাতুল ফিতর প্রদানের সময় ফিতরা প্রদানকারী যে এলাকায় সে অবস্থান করছে সে এলাকার গরীবরাই এর হকদার; সে (ফিতরা প্রদানকারী) উক্ত এলাকার স্থায়ী অধিবাসী হোক বা অস্থায়ী হোক। বিশেষ করে যদি সম্মানিত স্থান হয় যেমন মক্কা বা মদীনা অথবা সেখানকার ফকীররা এর প্রতি বেশি মুখাপেক্ষী হয় তবে সেখানে বের করাই নির্দিষ্ট। কিন্তু যদি সে এমন এলাকায় থাকে যেখানে কোনো হকদার না থাকে বা হকদার চেনা অসম্ভব হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে একজন উকিল নিযুক্ত করবে যে উকিল উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে তার যাকাতুল ফিতর আদায় করে দেবে।

    যাকাতুল ফিতরের হকদার:

    সদকাতু ফিতরের হকদার হচ্ছে (১) দরিদ্র, (২) ঋণগ্রস্ত, যারা তা আদায়ে অক্ষম। সুতরাং তাদেরকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে।

    একটি যাকাতুল ফিতর অনেক ফকীরকে দেওয়া জায়েয।

    আবার অনেকগুলো যাকাতুল ফিতর এক মিসকীনকেও দেয়া যাবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাদের কতটুকু দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করেন নি।

    এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যদি একদল লোক তাদের যাকাতুল ফিতর ওজন করার পর একটি পাত্রে জমা করে, তারপর সেখান থেকে পুনরায় পরিমাপ ছাড়া বণ্টন করে তবে তা আদায় হয়ে যাবে।

    কিন্তু ফকীরকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ যে, তাকে তারা যা দিচ্ছে তার পরিমাণ তারা জানে না; যাতে করে (ফকীর) নিজে কাউকে দিতে গিয়ে তার পরিমাপ না জেনে ধোঁকায় না পড়ে।

    আর ফকীরের জন্য বৈধ, কারো থেকে যাকাতুল ফিতর গ্রহণের পর নিজের পক্ষ থেকে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে পরিমাপ করার পর যাকাতুল ফিতর প্রদান করা। অথবা তা পরিপূর্ণ আছে বলে দাতার কথায় বিশ্বাস করে পরিমাপ ছাড়াই প্রদান করা।   হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী আনুগত্য করার তাওফীক দিন। (শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)

                                                                    ========২=========

    *মুসলিমদের ঐক্যমতে সাদাকাতুল ফিতর একটি ইবাদত । অতএব তাতে রসূল ﷺ এর নির্দেশিত পথ বাদ দিয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না ।[সহীহ মুসলিম ৪৩৮৫]*

    ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, বয়স প্রাপ্ত , অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতের বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।[বুখারী ১৫০৩]

    *আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমরা রসূল ﷺ -এর যুগে এক 'সা' পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসাবে বের করতাম । খেজুর, যব, কিসমিস, ও পনির ।[বুখারী ১৫০৮]

    *ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ্ বলেন: যাকাতুল ফিতরের জায়গায় অর্থ বা খাদ্য মূল্য নির্ধারণ করলে তা যথেষ্ট হবে না, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে আদেশ দেন নি ।[আল-মুদাওওয়ানা আল-কুবরা খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮৫ ]

    *ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন : আর ফিতরার খাদ্যমূল্য দিয়ে তা আদায় করবে না।[কিতাবুল-উম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭২]

    *ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ বলেন: "ফিতরার খাদ্যমূল্য প্রদান করবে না" তখন তাকে বলা হল, তারা বলে উমার বিন আব্দুল আযীয রহ: খাদ্যমূল্য গ্রহণ করতেন, তখন তিনি [ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ ] বলেন: তারা আল্লাহর রসূলের কথা পরিত্যাগ করেছে, আর তারা বলছে অমুক এটা বলেছেন? ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন রসূল ﷺ ফিতরা ফরজ করেছেন, আর আল্লাহ বলেছেন তোমরা আল্লাহর অনুগত্য করো এবং রসূলের অনুগত্য করো [সূরা নিসা ৫৯] অথচ একদল সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে অমুক বলেছেন আর তমুক বলেছেন।[[আল মুগনী লিইবনে কুদামা ২/ ৩৫২]]

    *ইবনু হাযম -রহিমাহুল্লাহ - বলেন:মূল্য মোটেই যথেষ্ট নয়, কারণ এটা সেটা নয় যা আল্লাহর রসূল ﷺ ফরজ করে দিয়েছেন ।

    *[আলমুহাল্লা খন্ড ৬ ,পৃষ্ঠা ১৩৭]*

    *ইমাম নববী রহি. বলেন: ফুক্কাহায়ে ইযামরা মূল্য বের করাকে নাজায়েয বলেছেন। [শরহে সহীহ মুসলিম খন্ড ৭ , পৃষ্ঠা ৬০]

    *ইমাম বাগাওয়ী - রহিমাহুল্লাহ্ - বলেন: সদকাতুল ফিতর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের খাদ্য থেকে বের করে নিতে হবে, এবং এর মূল্য বের করা জায়েয নয়। [শারহুস-সুন্নাহ খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪]

    *ওমার বিন আল-হুসাইন আল-খিরাকী - রহিমাহুল্লাহ - বলেন: (যাকাতুল ফিতরের হাদীসের স্থানে) আর যে মূল্য দিয়েছে, তার (ফিতরা) যথেষ্ট হয়নি। [আল মুগনী লিইবনে কুদামা খন্ড ৪ , পৃষ্ঠ ২৯৫]

    *ইবনু কুদামা -রহিমাহুল্লাহ- বলেন:

    ....এবং কেননা মূল্য বের করা নুসুস (হাদীস) হতে বিচ্যুত হওয়ার কারণ, সুতরাং এটি যথেষ্ট নয়, যেন তিনি ভালোর জায়গায় খারাপকে বের করলেন। [আল মুগনী লিইবনে কুদামা খন্ড ৪ , পৃষ্ঠ ২৯৭ ]

    * শাইখ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেন আমরা যা আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয নয় আর যে ব্যক্তি মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করে তা তাঁর পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে না কেননা তা উল্লেখিত আদিল্লায়ে শরঈয়া বিরোধী।[মাজমুউ ফাতাওয়া খন্ড ২ ,পৃষ্ঠা ২২১]]

    ????* শাইখ সলিহ আল_ফাওযান ( হাফিযাহুল্লাহ ) বলেন: মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা ( আদায় হিসেবে ) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী ﷺ এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রাসূল ﷺ খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন। এটা [জমহুর উলামা] অধিকাংশ আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুমুল্লাহ)'র মত। আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট (নস) দলিলের বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ।

    আর সুস্পষ্ট দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েয নয়। তারপর তিনি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ এর ঐ উল্লিখিত কথা উল্লেখ করার পর বলেন

    "সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।"[শারহু যাদিল মুস্তাকনি, খণ্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫ ]*

    *শাইখ সলিহ আল-উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ বলেন অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়, বরং তা খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আদায় করতে হবে, তবে অভাবী ব্যক্তি চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে উপকৃত হতে পারে।

    [ মাজমুউল ফাতাওয়া ও রাসাইল ১৮, ২৭৭ ]

    * আল্লামা আলবানী রহিমাহুল্লাহ্ বলেন,যে বলে: আমরা মূল্য দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করব, এটা গরীবদের জন্য উত্তম।

    সে দুইটা ভুল করে:

    ১_ সে দলিলের বিরোধিতা করলো, এবং বিষয়টি ইবাদতমূলক।

    ২_ অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এর অর্থ হল যখন আল্লাহ তাঁর মহানবীকে ওহি পাঠিয়ে তাঁর উম্মতের উপর খাদ্য দেওয়াকে ফরয করেছিলেন, তখন তিনি ফকীর ও মিসকিনদের স্বার্থ খেয়াল করে ফরয করেননি ।

    [সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ২৭৪ নং অডিয়ো ক্লিপ]*সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড:

    আমাদের জানামতে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, এটাই অধিকাংশ আলেমের মত।[আল- লাজনাতুদ- দাইমা , ফাতাওয়া নং ৯২৩১ ]

    যাকাতুল ফিতর খাদ্য দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উলামাদের উক্তি ।

    ===========================

    ১_ইমাম মালিক -রহিমাহুল্লাহ্ -

    ২_ ইমাম শাফেঈ - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৩_ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৪_ ইমাম নববী - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৫_ইমাম ইবনু হাযম - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৬_ইমাম বাগাওয়ী- রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৭_ইবনে কুদামা - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ৮_ওমার ইবনু আল-হুসাইন আল-খিরাকী - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১০_শাইখ আলবানী - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১১_ শাইখ বিন বাজ - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১২_শাইখ সলেহ আল-উছাইমিন -রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১৩_শাইখ মুকবিল আল-ওয়াদাঈ- রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১৪_শাইখ সলেহ আল-লুহাইদান - রহিমাহুল্লাহ্ -

    ১৫_শাইখ সলেহ আল শাইখ - হাফিযাহুল্লাহ্ -

    ১৬_শাইখ সলেহ আল-ফাওজান - হাফিযাহুল্লাহ্

    ১৭_সৌদি ফতোয়া বোর্ড ।

    ============================

    • এস.এম.আব্দুর রউফ,পি-এইচ.ডি,গবেষক,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।

     

     

     




    সাতদিনের সেরা খবর

    ধর্ম - এর আরো খবর

    হজে আরও ৯১ নতুন এজেন্সির অনুমোদন

    হজে আরও ৯১ নতুন এজেন্সির অনুমোদন

    ১ মে, ২০২২ ০১:০২ অপরাহ্ন