ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ শনিবার এই আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের (প্রসিকিউশন) উপপরিদর্শক সাফায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্রমতে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নিউ মার্কেট থানায় হস্তান্তর করে।
পরে শনিবার ঢাকার আদালতে হাজির করে সাত দিনের জন্য হেফাজতে রাখার আবেদন করেন নিউ মার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হালদার অর্পিত ঠাকুর। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশীদ তিন দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, মূল রহস্য উদঘাটন, এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ পূর্বক গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
মকবুলের পক্ষে ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাহেল আকরাম সম্রাট, আবুল কালাম আজাদসহ আরও আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, পেশায় আইনজীবী মকবুল নির্দোষ। তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। পরিস্থিতির শিকার তিনি।
মকবুল হোসেন নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। গ্রেপ্তারের আগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিলেন। তার দাবি, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, রক্তক্ষয়ী ওই সংঘাতের ঘটনায় উসকানি ছিল মকবুলের।
যে দুটি দোকানের কর্মীদের বচসাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে বড় ধরনের সংঘাত হয়, সেই দোকান দুটির মালিক মকবুল। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল আবার পরস্পরের আত্মীয়।
ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি এবং নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও জখম করার অভিযোগে এক মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মকবুলকে। এ মামলায় মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে; তারা সবাই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
দোকান মালিকদের ভাষ্য, ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের বচসার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এক দোকানকর্মী আর এক ডেলিভারিম্যান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।