বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারাই সমস্ত সিন্ডিকেটের প্রধান।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যেদিন বললেন, জিনিসপত্রের দাম কমাও নইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেদিনই পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি বেড়ে গেল। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে এই সরকারের বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই যে বাজারের সিন্ডিকেট। সমস্ত সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা। আজকে বাংলাদেশে যত চাঁদাবাজি, যত ঘুষ-খাওয়া সব কিছুর মূল নেতা হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ।
তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল, একই অবস্থা ছিল এবং তাদের অযোগ্যতা, দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে আজকে একটা প্রকৃত নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ বলতে পারে না। ওই টিবিসির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় মুখোশ পড়ে। এরপরে সেখানে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, সেখানে ধাক্কা-ধাক্কির করে, মারামারি করে কোনো রকমে এক লিটার তেল অথবা একটু ডাল, চালের জন্য।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কেন? এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে যে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো, আরেকটি কারণ হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ানো। এলপিজি গ্যাস আমদানি করে কে? জাতি জানতে চায়। তিনি হচ্ছেন সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি যতবার এলপিজি গ্যাস আমদানি করেছেন ততবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, একটি জায়গায় তিনি বলেছেন, করোনাকালে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম সব জায়গায় বেড়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে থেকে শুরু হল? আর কবে থেকে দেশের মানুষ চিৎকার করছে যে, তেলের দাম কমাও, চালের দাম কমাও, ডালের দাম কমাও, আমরা আর পারছি না।
করোনার দুইবছর ধরে যে, চুরি-ডাকাতি আপনারা করেছেন স্বাস্থ্য খাতে, করোনাকে কেন্দ্র করে প্রণোদনা দেওয়ার নামে সরকারি টাকা দিয়েছেন গরীবকে গরীব করার জন্য, সেকথার জবাবটা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, বাংলাদেশে এ বছর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে ২ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
সরকার হটানো ছাড়া বিকল্প নেই: জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হলে কলকাতায় কী ধরনের প্রতিবাদ হয় সেই উদাহরণ টেনে ‘সরকার হটানো’ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। কলকাতাতে ট্রাম ভাড়া যদি চার পয়সা বাড়ে, তো কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়। এরা ১৪ বছর ধরে এত নির্যাতন-নিপীড়ন করছে, আমরা ঠিক সেইভাবে বন্ধ করতে পারছি না।
কিন্তু বন্ধ করতে হবে আমাদেরকে। সমস্ত অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করতে হলে, মানুষকে বাঁচাতে হলে, দরিদ্র মানুষের দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা করতে হলে এই সরকারকে হটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
দেশের কোনো ক্ষেত্র দুর্নীতিগ্রস্ত হতে ‘বাকি নেই’ দাবি করে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আহŸান জানান মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেলেও সরকার নির্বিকার বলে অভিযোগ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকারকে এখনও বলব, সোজা পথে সোজা ভাবে চলুন। ভালো হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, জনগণের অধিকার ফেরত দেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফেরত দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুব দলের প্রতিটি ওয়ার্ড ছাড়াও গাজীপুর,নারায়ণগঞ্জ থেকে নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
য্বু দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন ও মামুন হাসানের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, আবদুল খালেক হাওলাদার, আলী আকবর চুন্নু, গোলাম রাব্বানী, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, কাজী আজিজুল হাকিম আরজু, জাকির হোসেন নান্নু, মজিবুর রহমানসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।#