এহরামের সাদা কাপড় পরে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মুসলিম। পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে মিনার তাবু থেকে সেখানে জড়ো হন হাজীরা। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন হাজীরা। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতে অবস্থানই হলো হজ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, হজের সময় মক্কার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি বা তার বেশি থাকতে পারে।
আজ সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত সব হাজি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ হাজিদের নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। হাদিসে আছে, ‘আরাফার দিন আল্লাহ এত বেশি পরিমাণ জাহান্নামিকে অগ্নি থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য কোনো দিবসে দেন না।’ (মুসলিম)
আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে আজ হজের খুতবা দেওয়া হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান কেউ গাড়িতে, কেউবা হেঁটে মিনায় পৌঁছান। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দান। আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় (আরাফাতের ময়দান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে) গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে এবং শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন।
জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজিদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। তাঁরা আগামীকাল কোরবানি দেবেন। অধিকাংশ হাজি নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে ৭২০ রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন।
হজ পালন করছেন ২৫-৩০ লাখ মানুষ: বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশের ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের লক্ষ্যে এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৫ হাজার মানুষ। পবিত্র হজ পালন করতে এসে এ পর্যন্ত ১৭ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার শুক্রবার বলেন, বাংলাদেশের হাজিরা সুস্থ আছেন। হজ কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষে হজযাত্রীদের সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করা হয়।