ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ১০ নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়েছেন। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সকল নিবন্ধিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এ অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে ঘোষিত অন্যান্য দাবিসমূহ হচ্ছে-বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে, আন্দোলনরত সকল বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণার কথা বলেন। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দল সমূহের সকল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (PR) পদ্ধতির প্রবর্তন ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবীতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণকালের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের ভেতরের বর্তমানে অনৈতিক যে কর্মকান্ড চলছে তার মধ্যে জীবনের ঝুকি নিয়ে যারা উপস্থিত হয়েছেন এজন্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সুন্দর বাংলাদেশকে অসুন্দর করে বিরোধীদলকে নির্মুল করার সরকারি ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ বাস্তবায়ন করতে দিবে না।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগনের দাবী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যারা এই ন্যায্য দাবীর বিরোধিতা করবে তারা এদেশের শত্রু। আজ ৩ নভেম্বর সরকারের মেয়াদ শেষ দিনে আমি ঘোষণা করছি, তারা যদি জাতীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন না করলে এই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। আমাদেরকে মামলার ভয় দেখানো হয়। বাস-লঞ্চ আটকানো হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী ও আলেম ওলামাদেরকে আটকিয়ে রেখে আন্দোলন দমন করতে পারবেন না। বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী ও আলেম ওলামাদেরকে মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের করা অবৈধ সংবিধানের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করবে আর আমরা তা চেয়ে দেখবো তা হবে না। ঈমানদাররা ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই এ নামতে প্রস্তুত আছে।
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ফিলিস্তিনে যেভাবে মা বোনদেরকে হত্যা করা হয়েছে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী,নায়েবে আমীর খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আল মোবারক, নায়েবে আমীর মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হক আজাদ, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার আক্কাস আলী সরকার, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, মুফতী এছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম,
সহকারী মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান প্রমূখ।
সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, জনগনের একই দাবী শেখ হাসিনার পতন। শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষা, অর্থ, ছাত্র ছাত্রীদেরকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করেছে। নাস্তিকতাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। দুর্নীতি দুঃশাসন যেভাবে করেছে তাতে তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের লোকেরা অপকর্ম করে বিরোধীদলের নাম দিচ্ছে। আমাদের উপর আক্রমণ করে গুলি করলে তা ফিরে যাবে। যারা বলে আপনি জান্নাতি তারা দালাল, আবুল ফজল-ফয়েজীর উত্তরসূরী।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের বিজয় কামনা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ন্যায় জালিম শাসকের জুলুম নির্যাতনের শিকার। আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে চাই। সামান্য বেতনে খাবার খাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করার কারনে শ্রমিকদের উপর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যে গুলি শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যাক্সের টাকায় কেনা হয়েছে, সে গুলি দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানুষের বুকে গুলি চালালে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে তা গ্রহন করবে, তবুও অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দিবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশের মানুষকে জেলে বন্ধি করা হয়েছে। এদেশের মানুষের স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতেই হবে। আজকের আন্দোলন ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ আন্দোলনে যখনই ডাক দেয়া হয় তখনই নেমে পড়তে হবে। তিনি বলেন, আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, দেশের মানুষের অধিকার আদায় ও মাজলুমের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে। আমরা চাইনা রক্ত ঝরুক। রক্ত ঝরলে দেশে বৈদেশিক শক্তি আসবে।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যদি আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে। আমাদের দাবী মেনে না নিলে জনগন যার যা কিছু আছে তা নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়বে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, ভোট চুরির কোন নির্বাচন এ দেশে হবে না। পুলিশ প্রশাসনের ভাইয়েরা এদেশের মানুষ, আপনারা সাধারণ মানুষের বুকে গুলি করে জীবন নাশ করবেন না।
নায়েবে আমীর মুহাদ্দিস আবদুল হক আজাদ বলেন, সংবিধান কুরআন-হাদিস নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশে যে অরাজকতা করা হচ্ছে এটা কোন শুভ লক্ষণ নয়। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দেশ অরাজক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে।
তিনি বলেন, সরকার উন্নয়ন করলেও মানুষের মন জয় করতে পারেনি। তারা দেশের মানুষকে গোলামে পরিণত করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে কথা বলেছেন তা সম্ভব হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যে সম্ভব নয়,অতীত তা বলে দেয়। হাবিবুল আউয়াল এর নির্বাচন কমিশন হাঁটুভাঙা কমিশনে পরিনত হয়েছে।
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশে সব কিছুর দাম বেড়েছে, কিন্তু গুলি আর টিয়ার সেল সস্তা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে, আর কত মানুষের জীবন হলে সরকার জনগনের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিবে?
প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, খারাপ নেতা, খারাপ নীতি, দুর্নীতি- দুঃশাসন ও সন্ত্রাসে আবদ্ধ দেশের প্রশাসন। আমার দেশের যে নেতারা বলে ভারত আছে তো আমরা আছি, তাদেরকে দেশের জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা যখন ঢাকামুখী তখন সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক যায়গায় গাড়ি-লঞ্চ রিজার্ভ করার পরেও টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের রাজনীতি প্রচলিত রাজনীতি নয়,ইবাদত।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সংকটকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সরকারের নুন্যতম দেশপ্রেম ও জনগনের প্রতি দায়বদ্ধতা যদি থাকে তবে, পীর সাহেব চরমোনাই'র দাবী ও ঘোষণা মেনে নিবেন।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাহী ব্যবস্থা, বিচার ব্যাবস্থা ও আদালতকে ধ্বংশ করেছে। আওয়ামী লীগ সংবিধানকে এমন যায়গায় নিয়ে গেছে যে এই সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকবে। এই সরকারকে জনগন বিশ্বাস করেনা এবং তাদেরকে আর চায় না। বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন তো দূরের কথা, তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
গাজী আতাউর রহমান বলেন, কিছু ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজদের জন্য দেশ ধ্বংস হবে তা মেনে নেয়া যায়না। তিনি সকল বিরোধী নেতা কর্মীদের মুক্তি দাবী করেন।