১২ ডিসেম্বর (রোববার) থেকে ফাইভজি বা পঞ্চম প্রজন্মের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে বিশ্বে বর্তমানে টেলিযোগাযোগশিল্পে সবচেয়ে আলোচিত এই সেবা। এদিন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার চারটি এলাকায় এবং ঢাকার বাইরে দুটি এলাকায় এই সেবা চালু করা হবে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে, সংসদ ভবনের কাছে মানিক মিয়া এভিনিউতে, সচিবালয়ে এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় টেলিটকের বিটিএস বা বেইস ট্রানসিভার স্টেশনের মাধ্যমে এটি চালু করা হবে। ঢাকার বাইরে চালু করা হবে টুঙ্গিপাড়ায় এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায়। এর মধ্যদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে ফাইভজি সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। এর আগে আজ শনিবার সকাল ১১টায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থান করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টেলিটকের ফোরজি সিমেই ফাইভজি সেবা মিলবে। ফোরজি সিম ফাইভজিতে সক্রিয় করে নিতে হবে। তবে টেলিটক গ্রাহকরা সবাই এখনই এ সুবিধা পাবে না। প্রথম পর্যায়ে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহকের ফোরজি সিম ফাইভজিতে সক্রিয় করে দেওয়া হবে। আর ফাইভজি সেবা পেতে হলে মোবাইল হ্যান্ডসেটটিও ফাইভজি সক্ষম হতে হবে। ভয়েস কল বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে এ সেবা কাজে লাগবে না। সেবাটি ইন্টারনেটের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন জানান, প্রথম পর্যায়ে কতজন এ সুবিধা পাবেন- সে সংখ্যাটি এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রথম পর্যায়ে ফাইভজি সেবায় ইন্টারনেটের গতি ফোরজির ১০ গুণ বেশি বা এক জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া যাবে। পরে আরো বাড়বে।
এর আগে গত অক্টোবরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং টেলিটক থেকে জানানো হয়েছিল, মধ্য ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকায় ১০টি বিটিএসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করা হবে। পরে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে ২০০ বিটিএসে।
গত ৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল বিপ্লবে অর্জিত সফলতার ফলে পৃথিবীর অনেক দেশেরই বাংলাদেশের সাথে তাল মিলানোর সুযোগ নেই। পৃথিবীর হাতে গুনা মাত্র কয়েকটি দেশ পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম প্রযুক্তি ফাইভ-জি-এর যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ আগামী ১২ জিসেম্বর ফাইভ –জি যুগে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে ৩২৪ বছরেরর পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা উদ্ভাবন ও প্রয়োগে নেতৃত্ব দিচ্ছে, পৃথিবীতে ডিজিটাল বিপ্লব বাংলাদেশ থেকেই সূচনা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তবে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষে বলা হচ্ছে, দেশে ফাইভজি চালুর জন্য যে ইকোসিস্টেম প্রয়োজন, তা এখনো নেই। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) সম্প্রতি বলেন, রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটককে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজির জন্য অনুমোদন ও স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) প্রদানের সিদ্ধান্তটি সরকারের। আমরা এ জন্য সরকারকে স্বাগত জানাই। তবে পরবর্তী সময়ে অন্য অপারেটরদের ফাইভজি সেবায় আসার যে কথা বলা হচ্ছে, তার জন্য দেশের ইকোসিস্টেম প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।