মাত্র ৪বিঘা জমিতে ৫লাখ টাকা খরচ করে স্ট্রবেরী ফলের চাষ করে মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানে প্রায় ২১লাখ টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষ ফাহাদ আলী। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা দূর্লভপুর ইউনিয়নের পারালুপুর গ্রামের একজন যুবক কৃষক ফাহাদ আলী। এত অল্প সময়ে কম পুঁজিতে খরচ বাদে ২১লাখ লাখ করে শুধু গ্রামে নয় শিবগঞ্জ কৃষক সমাজের মাঝে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
অন্যান্য কৃষকদের ভাষ্য এত অল্প সময়ে এত বেশী স্ট্রবেরী ফল ধরতে ও বিক্রি হতে এর আগে কোন দিনই দেখিনি। সরেজমিনে দুর্লভপুর ইউনিয়নের পার কালোপুর এলাকার ফাহাদ আলীর স্ট্রবেরির বাগানে গিয়ে আলোচনা করে জানা যায়, ফাহাদ বিঘা প্রতি বাৎসরিক ৫হাজর টাকা দরে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করছেন। তিনি বলেন, দুই ভাইসহ প্রায় ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে দিন রাত পরিচর্যা করেছি। এখান গত তিন মাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি। আশা করছি সামনে এক মাসের মধ্যে আরো ৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবো ইনশাল্লাহ।

ফাহাদ আরও বলেন, আমি গত তিন বছর থেকে স্ট্রবেরি চাষ করছি। গত বছর দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম এতে প্রায় ১২ লাখ টাকা পেয়েছিলাম। আর এবার ৪ বিঘা জমিত স্ট্রবেরি চাষ করে প্রথম থেকেই মন দিয়ে পরিচর্যায় মেতে ছিলাম। তাই ভালো ফলন হয়েছে। গত তিন মাসে এখন প্রায় ২৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি। আর এতে মোট খরচ হয়েছে আমার সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আমি স্থানীয় বাজারে স্ট্রবেরি বিক্রি করিনা ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেই ঢাকা কওরান বাজারে। সেখানে আমার স্ট্রবেরি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকবছর আগে আমার কাছে তেমন টাকা পয়সা ছিলনা। দুশচিন্তায় দিন কাটছিল। টিভিতে সংবাদ শুনে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। স্ট্রবেরী চাষ করেই সংসার চালিয়েও পাকা বাড়ি করেছি। কয়েক লাখ টাকা সঞ্চয়ও করেছি। সামনে মৌসুমে আরো বেশী স্ট্রবেরী ফলের চাষ করবো। ফাহাদের পাশের স্ট্রবেরি চাষ করা সাইরণ আলী বলেন, ফাহাদের হাতে স্ট্রবেরি চাষের জাদু আছে। ওর মত ভাল ফলন কারো হচ্ছে না। আমারও ১ বিঘা জমিতে ট্রবেরি ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছি। তার মধ্যে খরচ হয়ে গেছে প্রায় দুই লাখ টাকা। তাই প্রতিদিন একবার হলেও ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে আসি।

মাসিদুল নামে আরও এক স্ট্রবেরি চাষি বলেন, আমি গত দুই বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ করছি। এবার আমার দুই বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন রোগ-বালায় থেকে রক্ষা করতে পরিনি। তাই মাত্র সাড়ে চার লাক টাকা পেয়েছি। এ এলাকায় ফাহাদের মত কারো ফলন ভালো হয়নি। ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগানের এক শ্রমিক বলেন, গত তিন বছর থেকে আমি সহ ৩০ জন শ্রমিক এই জমিতে কাজ করছি। আমাদের প্রতিদিন ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ দিয়েই চলে আমার সংসার। আশে পাশে কারও এখন স্ট্রবেরির ফলন হয়নি। ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগানে কাজ করতে পেরে আমরা খুষি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এবার কৃষি বিভাগের সম্ননয়ে জেলায় মোট ২৫-২৬ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। যা গত বছরে তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে ছোট আম বাগানে বেশি স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার বেশি স্ট্রবেরি চাষ করছেন চাষিরা। এতে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।