ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে থাকা বিশালাকৃতির আন্ডারগ্রাউন্ড অস্ত্রের ডিপো ধ্বংস করে দেয়ার দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক টুইট বার্তায় তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, শুক্রবার রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এমআইএফ-৩১ থেকে নিক্ষেপ করা হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল কিনজাল হামলায় ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক অঞ্চলে অবস্থিত একটি গোলাবারুদের ভাণ্ডার ধ্বংস হয়েছে।
ইউক্রেনে হামলা শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করা হলো বলে দাবি করেছে রাশিয়া। তবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রাশিয়ার এমন দাবির প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেন। এসব মিসাইল আলোর গতির তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন।
রাশিয়ান সেনারা মারিওপোলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। সেজন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। চারদিক থেকেই মোটামুটি ঘিরে ফেলা হয়েছে মারিওপোলকে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের শহর মারিওপোলের রাস্তায় রাস্তায় দেখা যাচ্ছে ট্যাংক। ক্রমাগত চলতে থাকা সংঘর্ষের কারণে বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আটকা পড়া শতাধিক মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছে। সেখানকার একজন বাসিন্দা জানান, চলমান এ সংঘর্ষের মধ্যে শুধু সেখানে ধসে পড়া ভবনের স্তূপ কিছুটা সরানো সম্ভব হয়েছে। এখনো ভবনগুলোর ভেতরে আটকা পড়ে আছে অনেকে। খবর বিবিসি।
এছাড়া রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে এ যুদ্ধের কারণে যে ক্ষতি হবে তা কাটিয়ে উঠতে রাশিয়ার কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া মারিওপোলের যে জায়গায় হামলা চালিয়েছে, সেটাকে স্পষ্টতই বলা হয়েছিল বেসামরিক আশ্রয়স্থল। যদিও মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুরো শহরটিকে ঘিরে ধরেছে রাশিয়ান সেনারা। সেখানে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, নেই পানি ও গ্যাস। শহরের ভেতরে আটকা পড়েছে তিন লাখ মানুষ। রাশিয়া মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কমে আসছে। রাশিয়ার আক্রমণে এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি হাসপাতাল, চার্চ ও অগণিত ভবনের ব্লক। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক ভবনের ৮০ শতাংশ হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিন সপ্তাহ আগে ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক আগ্রাসন চালানোর পর সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিগ্রহ দেখেছে মারিওপোল। এটি মূলত একটি বন্দরনগরী, আজভ সমুদ্রের কাছে যেটার অবস্থান। শহরটির কেন্দ্রে রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। সেখানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা এখন পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে উঠেছে। শহরটির মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেন, রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক দেখা যাচ্ছে, আর্টিলারি গোলা এবং সব ধরনের অস্ত্র এ জায়গায় ছোড়া হচ্ছে। আমাদের সেনারা নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে যা করা দরকার করে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শত্রুদের বহর আমাদের তুলনায় অনেক বড়।
এরই মধ্যে কঠিন হয়ে পড়েছে এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ। দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই সেখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্র ও ভবনের বেজমেন্টে অবস্থান করছে।
ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। পুতিনকে উদ্দেশ করে দেয়া এক ভিডিওতে তিনি বলেন, এখনই সাক্ষাতের সময়, কথা বলার সময়। আমি চাই আমার এ কথা যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়, বিশেষ করে মস্কোয়।