কিয়েভে অবস্থান করছে রাশিয়ার বাহিনী। চরম আতঙ্কে ইউক্রেনবাসী। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে দেশ ছাড়ছে। এরমধ্যেওই রাশিয়ার বাহিনীর প্রতিরোধে অস্ত্রহাতে নিয়েছেন ইউকেনের অনেক সাধারণ মানুষ। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকেও অস্ত্র হাতে প্রতিরোধের আহবান জানানো হয়েছে।
ট্যাংক নিয়ে আগুয়ান রুশ বাহিনীকে ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টায় শুক্রবার সাধারণ নাগরিকদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইউক্রেইন সরকার। পালিয়ে না গিয়ে দেশ রক্ষায় রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানানো হয়েছে পুরুষদের।
ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের ১৮ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মলোটভ ককটেল বানিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর রিজার্ভ থাকা ‘টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্স’ এর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে কিয়েভের চারপাশ ঘিরে।
প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, “সেনাদের গতিবিধি আমাদের জানান, শত্রুকে পরাস্ত করতে মলোটভ ককটেল তৈরি করুন।”
পেট্রোল বোমা বানানোর প্রতিটি ধাপের নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোশাল মিডিয়ায় একটি লিফলেট পোস্ট করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডেনিসেঙ্কো বলেন, “কিয়েভকে রক্ষায় ইউক্রেনীয় সমর সরঞ্জাম ঢুকছে। আমি কিয়েভের বাসিন্দাদের অনুরোধ করছি- দয়া করে এটা ভিডিও করবেন না, এই গতিবিধি ভিডিও করবেন না। শহর রক্ষায় এটা আমাদের জন্য জরুরি।”
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্রসর হওয়া রুশ সেনাদের ঠেকাতে ইউক্রেইনের সামরিক যানগুলো এরই মধ্যে কিয়েভে ঢুকেছে। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে। বহু বেসামরিক নাগরিককে অস্ত্র হাতে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছিল, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পালিয়েছেন। তার জবাব দিতে রাতে এক ভিডিও বার্তায় আবির্ভূত হন তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা আর প্রধানমন্ত্রীকে পাশে রেখে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা সবাই এখনও এখানে। আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করছি, আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষা করছি। আর সে চেষ্টাই আমরা করে যাব।”
অবশ্য এই চেষ্টা সফল হবে বলে মনে করতে পারছেন না মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও। নিউজউইক লিখেছে, কিয়েভের পতন হলেই ইউক্রেইনের প্রতিরোধ ভেঙে পড়বে বলে ধারণা করছে ওয়াশিংটন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইউক্রেইন নেটো সামরিক জোটের সদস্য হতে চায়; যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় মিত্ররাও তাতে মোটামুটি রাজি। কিন্তু প্রতিবেশী বড় দেশ রাশিয়ার তাতে ঘোর আপত্তি।
এ নিয়ে তিন মাসের উত্তেজনা আর পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপড়েনের পর বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তার ঘোষণার পরপরই রাতের আঁধারে ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য অঞ্চলে সেনা, নৌ এবং বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
৩০ লাখ মানুষের নগরী রাজধানী কিয়েভে তখন থেকেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এড়ে পড়ার আগে বেজে উঠছিল তীক্ষ্ণ সাইরেন। সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটছিল বাংকার আর পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে।
তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে শুক্রবার দুপুরের দিকে রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়ে। বিকালেই কিয়েভ সিটি সেন্টারের উত্তরে ওবোলন আবাসিক এলাকার রাস্তা দিয়ে রাশিয়ার ট্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিও আসে সোশাল মিডিয়ায়।
পরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ইউক্রেইনের সব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। ২০০ হেলিকপ্টার এবং ট্রুপার পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে কিয়েভের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হোসটোমেল বিমানঘাঁটির।এর মানে হল, রাশিয়া এখন আকাশ পথে দ্রুত সেনা আনতে পারবে কিয়েভে।