রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিবিসির তথ্যমতে শুক্রবার জারি করা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইউরোপে থাকা এই দুই রুশ নেতার সম্পত্তি জব্দ করা হবে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পুতিন ও লাভরভের ঠিক কী পরিমাণ সম্পদ ইউরোপে আছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি ইইউ।
ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় বিশ্বনেতারা হলেন সিরিয়ার আসাদ, বেলারুশের লুকাশেঙ্কো এবং এখন রাশিয়ার পুতিন।
এর আগে এই সপ্তাহে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইইউ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল। এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অভিজাত ব্যক্তি ছাড়াও ব্যাংকিং ব্যবস্থার ৭০ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইইউর বৈঠক শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেন, ‘আমরা এখন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় প্রেসিডেন্ট পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
একজন জ্যেষ্ঠ ইইউ কূটনীতিক জানান, ইউরোপে রুশ নেতাদের খুব বেশি সম্পদ না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ।
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপকে দ্রুত পদক্ষেপ এবং মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে কিয়েভে রুশ হামলা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেখানো পথেই হাঁটবে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয় বলে জানিয়েছে সিএনএন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইইউ পুতিন ও লাভরভের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইনের সঙ্গে ফোনালাপের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত আরও জানাতে পারব বলে আশা করছি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন বাইডেন। সেসময় পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। একদিনে কী এমন পরিবর্তন হলো যে পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাকি বলেন, এই সংঘাতের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্টের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কঠোর নীতি, আমার বলা উচিত আগে থেকেই তিনি এমন। আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আবারও প্রমাণ হলো।’
এ দিকে হামলার দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে পৌঁছে গেছেন রাশিয়ার সেনারা। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তারা। রাজধানী রক্ষায় ইউক্রেনের সেনাদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকটি শহরে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব উঠছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, মস্কোসহ বিভিন্ন দেশের প্রধান শহরগুলোতে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। মস্কো ছাড়াও রাশিয়ার বেশ কটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে এক হাজারের বেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে বলে স্বাধীন পর্যবেক্ষক গ্রুপ ওভিডি-ইনফো জানিয়েছে।