শিরোনাম
  • সাধারণ রোগী হিসেবে এনআইও-তে চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত রাত জাগলে সাত ক্ষতি আইপিডিআই ফাউন্ডেশন হৃদরোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে : স্পিকার মহান মে দিবস পালিত শিক্ষকরাই আগামী দিনের স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর : শিল্পমন্ত্রী শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ নজর দিতে শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান মহান মে দিবস আজ সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ইয়ুথ শুটিংয়ে চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি, রানার্সআপ রাজধানী শুটিং ক্লাব
  • সাহিত্যিক-সাংবাদিকতার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু

    নিজস্ব প্রতিবেদক

    ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

    সাহিত্যিক-সাংবাদিকতার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু

    ছিন্নমূল পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানাতেন টিপু কিবরিয়া। শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পথশিশুদের অর্থের লোভ দেখিয়ে বাসায় ডেকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপঙ্গের নাছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। 

    বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের ঝোপঝাড়ে ছিন্নমূল শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করতেন কয়েকজন। এমন অভিযোগে ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন শিশু সাহিত্যিক টিপু। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুনরায় একই কাজ করেন। 

    এমন অভিযোগে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তার থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

    বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গ্রেফতার দুজনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে দুজনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

    সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরির করেন টিপু কিবরিয়া। তিনি আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি চক্রের বাংলাদেশ অংশের মূলহোতা। এমন অভিযোগে ১০ বছর আগে ২০১৪ সালেও গ্রেফতার হয়েছিলেন টিপু। জামিনে বেরিয়ে আসার পর আবারও একই কাজ শুরু করেন। 

    মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) গ্রেফতারের সময়ও তার বাসায় থাকা কম্পিউটার ও ক্যামেরা থেকে প্রচুর শিশু পর্নোগ্রাফির ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। টিপু এসব ছবি ও ভিডিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থাকা শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সদস্যদের কাছে মোটা অংকে বিক্রি করতেন।

    গ্রেফতার টিআইএম ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক ‘কিশোর পত্রিকা’য় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

    তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধ শতাধিক বই রয়েছে। গ্রেফতার অন্যজনের নাম কামরুল ইসলাম ওরফে সাগর। তিনি টিপুর সহযোগী।

    সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান বলেন, টিপুর এই জঘন্যতম রুপ ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম উম্মোচিত হয়। ওই সময়ও তাকে একই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা তাকে নজরে রেখেছিলাম। তিনি গ্রেফতার হয়ে জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়ান। 

    তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেলে শিশুদের ঢাকায় এনে পর্নোগ্রাফি তৈরি করতেন। মূলত অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে শিশুদের বাসায় নিতেন। এরপর তাদের দিয়ে নানা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। 

    এছাড়া ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানাতেন। নিজে গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক বেশে ঘুরতেন। এরপর ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য কিছু অর্থের লোভ দেখাতেন। পরে তাদের নিজের বাসায় ডেকে এনে তার ক্যামেরার সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গের ছবি তুলে এবং ভিডিও করতেন। 

    নিজের বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপঝাড়ে এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীলছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। এসব শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো হতে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভিকটিম হিসেবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

    মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, এই অশ্লীল ছবিগুলো বিভিন্ন নিষিদ্ধ ও পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন টিপু। এই ওয়েবসাইটগুলো থেকেই টিপু কিবরিয়ার আপলোড করা ছবিগুলো দেখে অনেক বিকৃত রুচির ব্যক্তিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তারা টিপু কিবরিয়ার কাছে ছেলে শিশুদের বিভিন্ন রকমের অশ্লীল ছবির চাহিদা দিতেন এবং টিপু অর্থের বিনিময়ে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে টাকা কামাতেন।

    সিটিটিসি প্রধান জানান, অভিযান পরিচালনার সময় তার ব্যবহৃত কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি টোটানোটা নামে দুটি এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও জর্মানির নাগরিকসহ প্রায় ২০/২৫টি টোটানোটা ও মেগা আইডি শনাক্ত করা গেছে। যারা এসব আইডি দিয়ে মূলহোতা টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে শিশু পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন কনটেন্টের জন্য যোগাযোগ করতেন।

    অভিযানের সময় তার ব্যবহৃত ক্যামেরা, পিসি ও ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রাথমিকভাবে পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা প্রায় আড়াই হাজার শিশুর স্থিরচিত্র এবং প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের প্রচুর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করেছে।

    কে এই টিপু কিবরিয়া!
    সিটিটিসি জানিয়েছে, টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্মাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্মাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক “কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধশতাধিকের ওপরে বই রয়েছে যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

    সিটিটিসি আরও জানায়, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়ায় টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেফতার হন এবং তার নামে পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হয়।

    ২০২১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। ‘একশো এক’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে সাহিত্য চর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো পথেই হাঁটতে শুরু করেন।




    সাতদিনের সেরা খবর

    জাতীয় - এর আরো খবর

    মহান মে দিবস পালিত

    মহান মে দিবস পালিত

    ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন