পূর্ববর্তী মুসলমানরা যারা তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধির পথে মুজাহাদা করতেন তারা চার বিষয়ের প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। কম খাওয়া, কম ঘুমানো, মানুষের সাথে কম মেলামেশা করা এবং কম কথা বলা।
আমাদের জামানার মানুষ দুর্বল কমজোর। এজন্য আমাদের জামানার মানুষদেরকে দুই জিনিস পরিত্যাগ করতে বলা হয়ে থাকে (কম ঘুমানো এবং কম খাওয়া)। এখন এমনিতেই মানুষ অনেক বেশি দুর্বল কমজোর। নানান অসুখ-বিসুখে ভুগতে থাকে। এখন যদি মানুষকে কম খাওয়া এবং কম ঘুমানোর মুজাহাদা করতে বলা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, অনেকেই এতটা দুর্বল হয়ে গেছে যে তার দ্বারা তখন জরুরি ইবাদত করাও সম্ভব হবে না। এজন্য কম খাওয়া এবং কম ঘুমানোর মুজাহাদা না করা চাই। বরং পরিমিত খেতে হবে এবং পরিমিত ঘুমাতে হবে (৬/৭ ঘন্টা)।
বাহার হাল খাওয়ার ব্যাপারে এতোটুকু খেয়াল রাখা যে, খাবার খাওয়ার একটা পর্যায়ে যখন এই খটকা লাগে যে, "আরেকটু খাবার খাব কি, খাব না?" এ অবস্থায় আর খাবার না খাওয়া। এই খটকা যখন লাগে তখন বুঝতে হবে, প্রয়োজন পরিমাণ খাবার আমি খেয়েছি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার দ্বারা বদহজম হয়, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, ইবাদত করার ব্যাপারে অলসতা পয়দা হয়। এজন্য খাবার খাওয়ার সময় যখন খটকা লাগে তখন আর না খাওয়া।
দ্বিতীয়ত রাতের খাবার একটু কম খাওয়ার চেষ্টা করা। রাতের খাবার কম খেলে বড় ফায়দা হচ্ছে রাতে ঘুম থেকে সহজেই জাগ্রত হওয়া যায়। আরো সুন্দর হয় রাতের খাবারটা এশার আগে খেতে পারলে। এশার আগে খেয়ে, এরপর এশার নামাজ পড়া হলো। মসজিদে যাওয়া হল, মসজিদ থেকে আসা হলো। কিছু হাঁটাহাঁটি হলো। এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু আমাদের জামানায় অধিকাংশ মানুষ আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, রাত্রের খাবার রাত দশটা সাড়ে দশটার সময় খাই। এটা ঠিক না।
খাওয়ার ব্যাপারে তৃতীয় বিষয় হচ্ছে প্রতি মাসে তিনটা নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা। আমাদের জামানায় আমরা কম খাওয়ার মুজাহাদা তো করবো না কিন্তু নফল রোজা রাখার মুজাহাদা টা করা চাই। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে প্রতি মাসে ৩ টি রোজা রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন। আরো ভালো হয় প্রতি সপ্তাহে দুইটা রোজা রাখতে পারলে (সোমবার বৃহস্পতিবার)। যাদের হিম্মত একেবারে দুর্বল তারা কমপক্ষে মাসে একটা রোজা রাখার চেষ্টা করি। এমন যেন না হয় যে, এক রমযান থেকে আরেক রমজান চলে আসলো, মাঝখানে আর কোনো রোজা রাখা হলো না। শুধুই রমজানের রোজা। এমনটা করা ঠিক না।
কম খাওয়ার মুজাহাদার দ্বারা পূর্ববর্তী মুসলমানরা যে ফায়দা অর্জন করতেন, আমরা প্রতি মাসে তিনটা রোজা রাখার দ্বারা সেই ফায়দা পাবো ইনশাআল্লাহ। রোজা রাখার হালতে সারাদিন মাঝেমধ্যে খেয়াল করা যে, আমি রোজা রাখছি আমার ক্ষুধার কষ্ট হইতেছে। দুনিয়ার সামান্য এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারতেছি না, তাহলে জাহান্নামে ক্ষুধার প্রচন্ড কষ্ট আমি কিভাবে সহ্য করব। সুতরাং জাহান্নাম থেকে আমাকে বাঁচতেই হবে। আর জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাইলে আল্লাহপাকের তামাম নাফরমানি তথা গুনাহ থেকে আমাকে অবশ্যই বাঁচতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে বহুত হিম্মত দান করেন এবং তৌফিক দান করেন। আমিন। (সূত্র: ইসলামী জীবন)।.