চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্টে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে ব্যাপকহারে কমেছে ভারত থেকে পণ্য আমদানী। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, ব্যবসায়ীরা হতাশ এবং এই বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে পাড়ী জমাচ্ছে। কিন্তু পানামা কর্তৃপক্ষ বলেছেন পণ্য আমদানী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডলার সংকট। সরজমিনে পানামা পোর্টের আমদানী রপ্তানী কারক ও পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে পানামা পোর্টের মধ্যে পাথর লোড –আনলোড হয় না। পাথর লোড-আনলোড হয় পানামা পোটের বাইরে কিন্তু লোড-আনলোড শ্রমিক চার্জ দিতে হয় আমদানী কারকদের। পানানা কর্তৃপক্ষ আমদানী –রপ্তানীকারকদের নিকট হতে গাড়ি লোডের জন্য শ্রমিক চার্জ বাবদ টন প্রতি ৬৯.৬৯ এবং আনলোডের জন্য শ্রমিক চার্জ ৬৯.৬৯ মোট ১৩৯.৩৮ টাকা ও ১৫%ভ্যাট সহ ১৬০.২৮ আদায় করেন এবং পরে আবার আমদানী-কারকদের ফেরত দেন লোডের জন্য শ্রমিক চার্জ টন ২৬টাকা এবং আনলোডের জন্য শ্রমিক চার্জ ২৬ টাকা। মোট ৫২ টাকা। বাকী ১০৮.২৮ টাকার কোন খোঁজ নেই।
গত ১০মার্চ শ্রমিক চার্জের একটি বিলের কপিতে দেখা গেছে ৫৪০ মেট্রিক টন পাথরের শ্রমিক চার্জ নিয়েছেন ভ্যাট সহ ৮৬হাজার ৫৫১.২০ টাকা। আমদানী-রপ্তানীকারকদেরকে ফেরত দিয়েছেন ২৮হাজার ৮০টাকা। ভ্যাট সহ বাকী ৫৮হাজার ৪৭১.২০ টাকা পানামাপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। আমদানী –রপ্তানীকারকদের দাবী হলো ১৫% ভ্যাট বাদে বাকী সব টাকাই আমরা ফেরত পাবো। কারণ আমরা পানামা পোর্টের মধ্যে পাথর লোড- আনলোড করিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থল বন্দরের কয়েকজন জানান নিয়ম অনুযায়ী পানামাপোর্টের ৫নং গেট দিয়ে রাত ১০টার পর পণ্যবাহী ট্রাক বের হতে পারবে না । কিন্তু পানামা পোর্টের একটি সিন্ডিকেটের দ্বারা ১০০- টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে রাত ১০টার পরে প্রতিদিনই প্রায় ২০-২৫টি করে পণ্য বাহী ট্রাক বের হয়। শুধু তাই নয় ৩নং গেট দিয়ে বাংলা খালি ট্রাক সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রবেশ করার নিয়ম থাকলেও পানামা কর্তৃপক্ষ বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে সেই গেট বন্ধ করে দেন এবং ১নং গেট দিয়ে গাড়ি প্রতি ১০০ টাকা নজরানার বিনিময়ে প্রতিদিন ২০/২৫ করে খালি ট্রাক প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।
সূত্রটি আরো জানান, নাইট চার্জ নেওয়া পরেও ভারতীয় খালি গাড়ি বের হওয়ার সময় ২০০ রুপী চাঁদা আদায় করে যার কোন রশিদ দেওয়া হয় না। পানামার মধ্যে লেবার বকশিসের নামে গাড়ী প্রতি ১২০০-১৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়, আরো অভিযোগ রয়েছে, পানামার জিএম বেলাল হোসেন এর নেতৃত্বে ৪/৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দূর্নীতিতে জড়িত। একমাত্র পানামা পোর্ট কর্তৃ পক্ষের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণেই পণ্য আমদানী ব্যাপক হারে কমেছে। গত দুই বছর আগে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪শ ট্রাক পণ্য আমদানী হতো।এখন হয় মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক। গোপন সূত্রে আরোজানা গেছে পানামাপোর্টে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ ফি বাংলাদেশী ১৬০.২০ নেয়ার নিয়ম থাকলেও নেয়া হচ্ছে ১৮০রুপী। এ বিষয়ে আমদানী রপ্তানীকারক গ্রুপের সভাপতি কাজী সাহাবুদ্দিন বলেন, দূর্নীতি সবখানে হচ্ছে সোনামসজিদ পানামাপোট তার বাইরে নয়।
তিনি আরো বলেন গত ০১-০৬-২০২৪খ্রী: তারিখে আমি বাংলাদেশ স্থল বন্দরের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেছি। তাতে উল্লেখ আছে যে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে এন্ট্রি ফি ১৮০রুপি আদায়, পানামার অবকাঠামে ইকুইপমেন্ট অপর্যাপ্ত থাকা সত্বেও পূনাঙ্গ চার্জ আদায় করে থাকে। পানামা পোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিফাত আরা হক বলেন এখানে ভারতীয় রুপী নেয়া হয় না। বাংলাদেশী টাকা নেয়া হয়ে এবং ১৬০.২০টাকাই নেয়া হয়। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম বা দূর্নীতি হয় না। পানামা পোর্টের জেনারেল ম্যানেজার বেলাল উদ্দিন বলেন অন্যান্য বন্দরে সাথে মিল রেখেই বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী সোনামসজিদ স্থল বন্দরের পানামা পোর্টের সমস্ত কার্যক্রম চলছে। কোন অনিয়ম বা দূর্নীতি হয় না।