বিএনপির আন্দোলনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সরকার আবার দমননীতি চালানো শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সারা দেশে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে জনগণ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে দাবি করে এ কর্মসূচি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সময় সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে দলের ঘোষিত চলমান কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের হামলার ঘটনাসমূহ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে এতদিন ধরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে, এখন তাতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে হামলা শুরু করেছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, দলীয় কার্যালয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ-যুব লীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, নেতা-কর্মীদের খুন-জখম করছে।
তিনি বলেন, একবারও তারা (ক্ষমতাসীন দল) চিন্তা করছে না, যে কাজটা তারা শুরু করেছে-এটা সমগ্র দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, কাউকেই গ্রেফতার করা হবে না, সভা-সমিতির সব কিছু করতে দেয়া হবে। তারা কথা বলবেন একটা আর কাজ করবেন আরেকটা। এখন দেখা যাচ্ছে যে, ঠিক উল্টা কাজটি তারা করছেন। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তাদের যে সন্ত্রাসী চরিত্র সেটা আরও একবার এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের জনগণে কাছে উদ্ভাসিত হয়েছে। এভাবেই তারা এদেশে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছেন, বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ঘোষিত উপজেলা-থানা-পৌরসভা-ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি আগামী ১০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত চলবে। যেসব উপজেলা ও থানায় কর্মসূচি হয়নি সেগুলোতে এই বিক্ষোভের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এর পরে আমরা পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করব।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে উপজেলা-থানা-পৌরসভা-ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে যশোর, মুন্সিগঞ্জে, টাঙ্গাইল, ফেনী, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ঠাকুগাঁও, লক্ষীপুর, ময়মনসিংহ, মাগুরা, গাইবান্ধা, বরিশাল, খুলনা, নেত্রকোনা, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, নরসিংদী, রাজশাহী, নোয়াখালী, ভোলা, নাটোর, কুমিল্লা, নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলায় গত ২২ আগস্ট থেকে চলমান বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলার ঘটনাসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এসব হামলার ঘটনায় সাড়ে ৭ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর নামে। গ্রেফতারের সংখ্যা ৬০ জনের অধিক।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের ‘জোট ত্যাগ’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তার কোনো জবাব দেননি বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন আবদুস সালাম আজাদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি করবে বিএনপি। ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসুচি এবং ২ তারিখ আলোচনা সভা আছে।
জনগণের ঐক্য তৈরি হয়েছে: জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদা এক সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে তারা (সরকার) সবচেয়ে ভয় পেয়েছে এ জন্য যে, জনগণের মধ্যে একটি ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের এ ঐক্য বহাল থাকলে সরকারের পতন হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য সৃষ্টি হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই সরকারকে ভেঙে, সত্যিকার অর্থেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কারণ উনার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘকাল ধরে খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রাম করছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা আমরা বলছি। কিন্তু এ সরকার মনে করে খালেদা জিয়া তাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা জামালা হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।#
.jpg)
