ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সরকার অতিমাত্রায় ভারতপ্রেমী হওয়ায় ভারতের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে পারছে না। ভারতের পানি আগ্রাসন ও সীমাšেত্ম বাংলাদেশীদের হত্যার কোন কার্যকরি পদড়্গপে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারতে বিজেপি নেত্রী কর্তৃক রাসূল সা. এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. এর শানে কটুক্তির প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও আমাদের সরকার ভারত-এর বিরম্নদ্ধে নিন্দা প্র¯ত্মাব আনতে পারেনি। তাদের কাছে নবীর ভালবাসার চেয়েও ভারতের ভালবাসা বেশি।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের সভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। শত-শত নদীর গতিপথ ধরে বিকশিত হয়েছে জীবন, গড়ে উঠেছে জীবিকা প্রবাহ। অথচ দেশের সরকারগুলোর ভুল নীতি, ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এই দেশটাকে মরম্নভুমি বানিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, বন্যায় সয়লাব করে জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে। বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলিমিটার নৌপথ ছিলো। বর্তমানে তা ৪ হাজার কিমিতে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পরে শুকিয়ে গেছে ১৫৮টি নদী। পীর সাহেব বলেন, ভারতের সাথে যৌথ ৫৪টি নদীসহ দেশের প্রধান পানির প্রবাহগুলোকে ভারত ফারাক্কা, গজলডোবা ইত্যাদি বাধ দিয়ে মেরে ফেলেছে। প্রয়োজনীয় মুহুর্তে পানি আটকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংশ করছে আর বর্ষার সময়ে পানি ছেড়ে দিয়ে ফসল নষ্ট করছে, মানুষ হত্যা করছে।

শনিবার বিকেলে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ের লড়্গ্েয ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বিশাল গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জমায়েতে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যড়্গ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিলস্নাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যড়্গ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব অধ্যড়্গ শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা  নূরম্নল করীম আকরাম, শ্রমিকনেতা আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও ডা. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
গণমিছিল পূর্ব সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম।
 
উলেস্নখ্য যে, গত ১লা এপ্রিল রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসমাবেশ থেকে দলের আমীর ৩ মাসের কর্মসূচি এবং ১৫ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. এর শানে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদ, কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরম্নদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রাšেত্মর প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিড়্গা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিড়্গার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লড়্গ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়্গ্েয ৮ বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণমিছিল বিশাল জনসমূদ্রে রূপ নেয়। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড়, শাšিত্মনগর পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করতে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নেতৃবৃন্দের হ¯ত্মড়্গেেপ পরিস্থিতি শাšত্ম হয়। মিছিলের একমাথা বিজয়নগর পৌঁছলেও অপরমাথা বায়তুল মোকাররমই থেকে যায়।

পীর সাহেব চরমোনাই আড়্গপে করে বলেন, আমাদের সরকারগুলো ভারতের অন্যায্য পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মানকে যৌথ আলোচনা বা আšত্মর্জাতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে নাই। বছরের পর বছর ভারত অব্যাহতভাবে পানি আগ্রাসন চালিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিনষ্ট করছে অথচ সরকারগুলো কোন ধরনের প্রতিকার করতে পারে নাই বরং নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারতীয় পানি আগ্রাসন এখন দেশের মানুষের বাঁচা-মরার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারগুলোর এই ব্যর্থতা আর মেনে নেয়া যায় না।

তিনি বলেন, এই সরকার বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে জনমতকে উপেড়্গা করে ড়্গমতায় জেঁকে বসে আছে। ভোটাধিকার হরণ করা, খুন-গুম করে ভিন্নমত দমন করা, উন্নয়নের নামে সীমাহীন লুটতরাজ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছে। তিনি বলেন, এরা দেশের তরম্নণ প্রজন্মকে ধ্বংস করতে মদসহ মাদকের সয়লাব ঘটাতে মদের লাইসেন্স দিচ্ছে, শিড়্গা থেকে ধর্মীয় শিড়্গাকে সরিয়ে দিচ্ছে।
পীর সাহেব বলেন, দুর্নীতি, দলীয় কর্মী তোষণের কারণে দ্রব্যমূল্য জনতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। মানুষ দুর্ভিড়্গরে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে আর সরকার উন্নয়ন দেখিয়ে লুটতরাজ সমাপ্তির উৎসব করেছে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এই সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিকদের সম্মান-সমৃদ্ধি ও সম্ভবনার জন্য বিপদজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য একটি গণ আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন,বিজেপি নেত্রী নুপুরের বিতর্কিত মšত্মব্যের বিরম্নদ্ধে ভারতের রাজ্যেই নিন্দা প্র¯ত্মাব পাশ হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কোন নিন্দা প্র¯ত্মাব পাশ করতে পারে নাই। এরচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, শিড়্গার্থীদের নৈতিকতা এেেতা নিচে নেমেছে যে তারা শিড়্গকদের পিটিয়ে মারছে। এমতঅবস্থায় যেখানে শিড়্গার্থীদের নৈতিক শিড়্গায় জোড় দেয়ার কথা সেখানে এই সরকার শিড়্গাক্রম থেকে উচু নৈতিকতাসমৃদ্ধ ইসলাম শিড়্গাকে সংকুচিত করছে। জাতিকে ধ্বংশ করার পদড়্গপে তারা একেরপর এক নিয়েই যাচ্ছে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিলস্নাহ আল মাদানী বলেন, বন্যার পানিতে যখন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে তখন কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মাসেতুর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান করাই প্রমাণ করে এই সরকার কতটা জনবিরোধী সরকার।