৫২৫কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট প্রায় নয় লাখ জনঅধুষিত শিবগঞ্জ উপজেলায় জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার জর্জরিত শিবগঞ্জ থানা। শিবগঞ্জ থানা সূত্র মতে শিবগঞ্জ থানা একজন অফিসার ইনচার্জ, একজন ওসি( তদন্ত) ও একজন ওসি(অপারেশন) পদের মধ্যে ওসি(অপারশন) পদে দীর্ঘদিন যাবত খালি আছে। এস আই আছে ১৭ জন এবং এ এস আই ১২জন ও কনস্টেবল ৩৬ জন আছে। যা জনগণের তুলনায় অনেক কম।হিসাব অনুযায়ী শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্রায় নয় লাখ জনগণের জন্য মাত্র ৬৭ জন পুলিশ।সে অনুযায়ী ১৩ হাজার ৪শ ৩২জনের মানুষের সেবা দিচ্ছে মাত্র একজন পুলিশ। সুত্রেমতে ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট পুলিশের সংখ্যা দুই লাখ ৯ হাজার জন। সে অনুযায়ী ৭৭৪জনগণের জন্য একজন পুলিশ সেবা দিতে পারে। তবে পুলিশের মধ্যে মোটা অংকের পুলিশ বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত আছে। সে হিসাবে এক হাজার জনগনের জন্য মাত্র একজন পুলিশ সেবা দিতে পারে।
সুত্র অনুযায়ী ভারতে ৬৬০ জনে একজন ,সিঙ্গাপুরে ১৪০জন্যে একজন ,ম্যালেশিয়ায় ২৪৯জনে একজন পুলিশ,থ্যাইল্যান্ডে ২৮০জনে একজন পুলিশ নিয়োজিত । কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা অনেক কম। শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া,মোবারকপুর, শাহবাজপুর ও কানসাটের কয়েকটি রাস্তায় বছরের প্রায় সময় ডাকাতি, ছিনতাই হতেই আছে। অন্যদিকে এই উপজেলায় রয়েছে নদী ভাঙ্গন কবলিত মনাকষা, দূর্লভপুর,পাকা ও উজিরপুর এ চারটি ইউনিয়নের রয়েছে একাধিক দুর্গম এলাকা। তাছাড়া এ সব এলাকায় বেশীর ভাগ পানি পথ হলে বিকল্প কোন নৌ যানবাহন নেই।ফলে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খা বাহিনীর দ্রুত সেখানে পৌঁছতে পারে না।তাছাড়া পুলিশের নিজস্ব যানবাহনের সংকট থাকায় মিশুক বা অটো রিজার্ভ ভাড়া করে রাতে ডিউটি করতে হয়। এস আইদের জন্য সরকারীভাবে কোন মোটরসাইকেল বরদ্দ নেই। তাদের হয় নিজের মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয় অথবা ভাড়া করা যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়।যার ফলে পুলিশকে লক্ষ্য অর্জনে অনেক সময় ব্যর্থ হয় ।
অন্যদিকে পুলিশের পর্যাপ্ত আবাসিক ভবন না থাকায় বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়।এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জুবায়ের আহাম্মদ বলেন, ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিযে ৫২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রায় ৯ লাখ জনগণের শিবগঞ্জ উপজেলা একদিকে পুলিশের স্বল্পতা,যানবাহনের সংকট,কয়েকটি ত্রাসের এলাকা ও নদীভাঙ্গন কবলিত ৪টি ইউনিয়নের একাধিক দূর্গম এলাকা,মাঝে মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা সব মিলিয়ে শিবগঞ্জ থানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুলিশের স্বল্পতার কারণে জনগণের সেবা দিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে । পর্যপ্ত যানবাহন না থাকায় অভিযান পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে। মাত্র দুইটি আবাসিক ভবন থাকায় পুলিশ অফিসাররে বাইরে থাকতে হয়। তাছাড়া দূর্গম ্ও ত্রাসের জনপদ থাকলেও শিবগঞ্জে কোন পুলিশ ফাঁড়ি নেই। ফলে স্বল্প সংখ্যাক পুলিশের মধ্য থেকে ঝুঁকিপুর্ণ রাস্তা ও দূর্গম এলাকায় পুলিশ পাঠাতে হয়। তাই জনবল বৃদ্ধি,যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো ও আবাসিক ভবন নির্মান করা হলে পুলিশ আগের চেয়ে আরো জনবান্ধব হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, শিবগঞ্জ একটি বৃহত্তম উপজেলা হিসাবে পর্যপ্ত সংখ্যাক পুলিশ কনস্টেবল ও অফিসার নিয়োগ,যানবাহনের ব্যবস্থা, আবাসিক ভবন নির্মান ও ঝুঁকিপুর্ণ ও দুৃর্গম এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি দেয়া অতীব জরুরী।তাই আমি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি ।তাছাড়া আমি উপজেলার আইন শৃংখলার সভায বিষযটি আলোচনা করবো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার কে এইচ এম আব্দুর রাকিব বলেন শিবগঞ্জে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবল দেয়া হয়েছে। কতজন মানুষের সেবা একজন পুলিশ দিতে পারবে তা তিনি জানাতে পারেননি।যানবাহনের সমস্য নেই। আবাসিক ভবন দুটি আছে। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তাদের পন্থা অনুযায়ী একটি থানায় যতজন জনবল দেন তা দিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।তবে আমরা চাহিদা অনুযায়ী জনসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একে এম গালিভ বলেন, এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো। তবে তিনি লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন।অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন আগের চেয়ে জনবল বেশী দেয়া হয়েছে, যানবাহন দুটির স্থানে চারটি করা হয়েছে।আবাসিক ভবন দুইটি আছে।তারপরও যেহেতু শিবগঞ্জ উপজেলা একটি বৃহত্তম এলাকা হিসাবে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে দুৃর্গম ও ত্রাস এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি দেয়া, আরো জনবল বাড়ানো ও পর্যাপ্ত যানবাহনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।