রাজবাড়ীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত প্রতারণা মামলায় মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওরফে মোঃ রাকিব হাসান শুভ নামে এক ভূয়া চিকিৎসককে মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে প্রেরণ করেছে। তিনি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাওনারা গ্রামের মোঃ সোহরাব হোসেনের ছেলে।
জানাগেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সৌরভ দাস বাদী হয়ে ২০২১ সালের ১৬ জুন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওরফে মোঃ রাকিব হাসান শুভর বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশনের এবং এইচএসসি পাশের ভূয়া, জাল সনদ তৈরী করে চাকুরীতে যোগদান করে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারী অংশের ১লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্ত্বসাত করেন।
মামলার অভিযোগে বলেন, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওরফে মোঃ রাকিব হাসান শুভ বিএমডিসি কোয়ালিফিকেশন পরীক্ষায় কয়েকবার অকৃতকার্য হয়েও নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করছেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে ভূয়া ডাক্তার সাজার কারণে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালতে এক লক্ষ টাকা জরিমানা হয়। ডাক্তার না লেখার অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার করার পরও জাল রেজিষ্ট্রেশন সনদ ও জাল এইচএসসি পাশের সনদ দিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এমএনএইচ প্রজেক্টে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেন। তার দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই করে জাল-জালিয়াতি প্রমানিত হয়। এরমধ্যে বেতন ভাতাদি বাবদ এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্বসাৎ করে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী আলীপুর এলাকার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে রাকিব আহসান শুভকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বেগমগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আল জিনাত।
অভিযানে অংশ নেন র্যাব-১১, সিপিসি-৩ কোম্পানি কমান্ডার মাহমুদুল হাসান, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফয়সাল মো. তৌহিদুজ্জামান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নাম তার হাবিবুর রহমান বাবুল। প্রথম জীবনে ছিলেন স্কুলের শিক্ষক। এ সময় ২৩ লাখ টাকার তহবিল নয়ছয়ের দায়ে চাকরি চলে যায়। এরপর নিজের নাম পাল্টে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে পাশের গ্রামের এক চিকিৎসকের নামে বনে যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু এতেও পার পেলেন না তিনি। এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে ধরা পড়েন এবং এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে সে যাত্রায় রেহাই পান। কিন্তু থেমে থাকে না তার প্রতারণা। এরপর পুলিশের রেশনের মালামাল সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে শুরু করেন নতুন প্রতারণার কারবার। একে একে চারজন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী তার কথার জাদুতে মুগ্ধ হয়ে তার হাতে তুলে দেন এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই টাকায় গ্রামের বাড়িতে অন্যান্য সম্পত্তির পাশাপাশি তিনি নির্মাণ করেন বিলাসবহুল একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
এই প্রতারকের প্রকৃত নাম হাবিবুর রহমান বাবুল। ২০১৫ সালের একটি স্ট্যাম্পে জালিয়াতি করে ১৯৯৯ সালের তারিখ বসিয়ে হাবিবুর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নিজের নাম বদলে হয়ে যান ডা: রাকিব হাসান শুভ। নাওপাড়ার পাশের গ্রামে ডা: রাকিব আহসান নামে একজন ডাক্তার ছিলেন। হাবিবুর রহমান সেই ডাক্তারের পরিচয়ে শুরু করেন চিকিৎসার নামে প্রতারণা। এই প্রতারকের শিকার হয়ে অবসর জীবনে পাওয়া চাকরির পেনশনের প্রায় ৬৯ লাখ টাকা খুইয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য আবুল কালাম তালুকদার। প্রতারক শুভ বিরুদ্ধে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে পাঁচটি মামলা হয়েছে। তার শ্যালক মেহেদি হাসান মামুনও ঠিকাদারি পার্টনার হতে তার হাতে তুলে দেন আরো ৫০ লাখ টাকা। এ দিকে বিজিবির এ সাবেক সদস্য ছাড়াও এই প্রতারকের প্রতারণার শিকার হয়েছেন গীতা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার সাহা ও রঞ্জন সাহা নামে আরো দুই ব্যবসায়ী। ফরিদপুর জেলা পুলিশের রেশন সরবরাহের জন্য ডাল ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমারের কাছ থেকে বাকিতে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ডাল কিনে সেই টাকা পরিশোধ করেনি বাবুল। এরপর রঞ্জন সাহা নামে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ হতে তিনি ডাল সরবরাহ করতে থাকেন। এভাবে রঞ্জন সাহার মিল থেকেও তিনি ৪০ লাখ টাকার ডাল কিনে টাকা পরিশোধে গড়িমসি করতে থাকেন। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে কোতোয়ালি থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।
রাজবাড়ী দুদকের পিপি এ্যাড. বিজন কুমার বোস বলেন, হাবিবুর রহমান বাবুল ওরফে রাকিব হাসান শুভ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী আলীপুর এলাকার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ায় তাকে ২ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। মঙ্গলবার ধার্য তারিখে তাকে রাজবাড়ী আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।