ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন। আমৃত্যু তিনি ছিলেন কুমারী।
সঙ্গীতের নাইটিঙ্গেল হিসেবে খ্যাত এই শিল্পী কেন বিয়ের বন্ধনে নিজেকে জড়াননি সেই প্রশ্ন বহুবার তাকে করা হয়েছে। প্রায়ই সেই প্রশ্নটি তিনি এড়িয়ে গেছেন। কখনো বাধ্য হয়ে বলেছেন, ভাই-বোনদের মানুষ করতে গিয়ে তার আর বিয়ে করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আদতে কি তাই?
ভারতী সংবাদমাধ্যম পত্রিকা ডটকম লতার বিয়ে না করার পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমটি হচ্ছে, সংসারের হাল ধরা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়া।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মাত্র ৪২ বছর বয়সে পরপারে চলে যান লতার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর। দীননাথ তার পরিবারের জন্য তেমন কোনো সম্পদ রেখে যাননি। পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মা সুধামতী তখন দিশেহারা। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১২ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯৪২ সালে মারাঠি সিনেমায় গান গেয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। ভাই হৃদয়নাথ এবং ছোট তিন বোন মীনা, আশা, উষা যখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে- তখন আর সংসার করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি লতার।
লতা মঙ্গেশকরের বিয়ে না করার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ডুঙ্গারপুর রাজবংশের ছেলে মহারাজা রাজ সিংহের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল লতার। মহারাজা রাজ সিংহ ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) দায়িত্বে ছিলেন।
মহারাজা রাজ সিংহ ছিলেন লতা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ কারণে তিনি মাঝেমধ্যেই লতা মঙ্গেশকরের বাড়িতে আসতেন। সেখান থেকে তাদের আলাপ-পরিচয় শুরু হয়। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক প্রেমে পরিণত হয় এবং তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই বিয়ের জন্য রাজি ছিলেন না রাজ সিংহের বাবা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংহ। তার বক্তব্য ছিল, লতা মঙ্গেশকরের একজন সাধারণ বাড়ির মেয়ে। তার ছেলের বিয়ে হবে কোন রাজকীয় পরিবারে।
বাবার কথাকে সম্মান দিয়ে মহারাজা রাজ সিংহ লতা মঙ্গেশকরকে বিয়ে করেননি। একইসঙ্গে তিনি আজীবন অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ে পর্যন্ত না গড়ালেও লতার সঙ্গে তিনি আজীবন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখেন। ২০০৯ সালে মহারাজা রাজ সিংহ মৃত্যুবরণ করেন। আমৃত্যু তিনি তার কথায় অনড় ছিলেন।
২০১৩ সালে হিন্দুস্তান টাইমসের নেওয়া এক সাক্ষাতকারে লতা মঙ্গেশকরের কাছে তার ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
লতা সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘কিছু জিনিস থাকে শুধু হৃদয়ের মধ্যে থাকার। আমাকে সেই জিনিস হৃদয়ের মধ্যেই রাখতে দিন।’
সংসার জীবনে না জড়িয়ে কোনো ধরনের অপূর্ণতা অনুভব করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেতিবাচক ও হতাশাজনক ভাবনাগুলো দূরে সরিয়ে রাখা উচিত। প্রথমে নিজের ভেতরে সুখ ও পূর্ণতার বোধ জাগ্রত করা জরুরি। তা না হলে শুধুমাত্র বিয়ে বা সন্তানের মাধ্যমে পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন তার তাত্পর্য হারিয়ে ফেলে।’