সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিঃ (মিল্কভিটা) এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বুধবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৪ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে দেড় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সর্বস্তরের সমবায়ীদের পক্ষে সাকতোলা প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিঃ শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জের মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী আবেদনে স্বাক্ষর করেন।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিঃ (মিল্কভিটা) একটি জাতীয় সমবায় প্রতিষ্ঠান। দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধজাত এই প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার জন্য সকল সমবায়ীরা বিনীত প্রার্থনা করছি যে প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে স্বল্প পরিমানের তরল দুধ সংগ্রহ ও বিক্রয় দিয়ে শুরু হলেও ২০১৫ সালের পূর্বে প্রতিদিন প্রায় ২ লক্ষ লিটার তরল দুধ বাজারজাত করে আসতেছিল। ফলে মিল্কভিটার তরল দুধ ও অন্যান্য দুদ্ধজাত পণ্য সকলের কাছে একটি আদর্শ শিশু খাদ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকল পর্যায়ে সুনাম অর্জন করে। ২০১৫ সালের পূর্বে প্রান্তিক খামারিদের দুধের ন্যায্য মূল্য ও বছর শেষে দুধের পরিমানের উপর বোনাস প্রদান করা হয়, উপরন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঈদ বোনাস সহ ৭ টি বোনাস ও ৪০% বেতন বেসিকের সাথে যোগ করে প্রদান করা হইত, যা এখন বিদ্যমান নাই। উক্ত সকল সুযোগ-সুবিধা তখন সম্ভব হয়েছিল অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করার কারণে ফলে খামারীরা ও কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগনও এর সুফল পেতে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মার্চ ২০১৫ সালে সদ্য সাবেক শৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ নাদির হোসেন লিপু জোর করে, কৌশলে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সরিয়ে দিয়ে বিনা নির্বাচনে অণ্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো মিল্ক ভিটাকেও দখলে নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু করে। ফলে বিগত কয়েক বৎসর যাবত বর্তমান অসমবায়ী ব্যাক্তি দ্বারা গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির অদক্ষ পরিচালনা ও দুর্নীতির কারনে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। নিম্নে আপনার জ্ঞাতার্থে প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো :
(ক) বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সরকার হতে শত শত কোটি টাকা এনে লুটপাট :
অত্র প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটি কে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন ২০১৫ ইং সনের পর হইতে কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থপনা কমিটি উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন ।
(১) সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন প্রকল্প :
প্রায় ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা, নতুন করে স্থাপন করে কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রকল্পটি নিম্নমানের মেশিনারীজ ক্রয় করার কারনে আজও আলোর মুখ দেখেনি। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে ব্যাপক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় কিন্তু প্রকল্পটি থেকে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ উৎপাদনে যাইতে পারে নাই । পূর্বের স্থাপিত পাউডার প্লান্ট দিয়েই উৎপাদন চলছিল । ফলে উক্ত ১১৫ কোটি টাকার মেশিনারিজ আমদানি দেখাইয়া উক্ত ১১৫ কোটি টাকার জন্য ২০১৫ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটি দায়ী।
পরবর্তীতে বিভিন্ন লোক মুখে জানা যায় ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প মাত্র ২৫ কোটি টাকা দিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং দূর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। যা অদৃশ্য হাতের ইশারায় দূর্নীতি দমনের তদন্ত বন্ধ রয়েছে।
(২) শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ২০ কোটি টাকা কোথায় কিভাবে আছে তাহাও ট্রাস্টি বোর্ড জানে না। শ্রমিক কর্মচারী হইতে আপত্তি উঠিলে বেতন হইতে প্রভিডেন্ট ফান্ড বন্ধ করে দেয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার চাচা শেখ নাদির হোসেন লিপু। ফলে সংস্থা হইতে প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড হইতে শ্রমিক কর্মচারীরা বঞ্চিত হন। শ্রমিক কর্মচারীদের প্রফিডেন্ড ফান্ডের ২০ কোটি টাকা ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া নিজের খেয়াল খুশি মত শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন কিন্তু অদ্যবধি লাভ্যাংশের কোন হিসাব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেয়া হয় নাই। ২০ কোটি টাকা সময়মতো ট্রাস্টি ফান্ডে মিল্কভিটা পরিশোধ না করায় শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ আর্থিক ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
(৩) বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ দুগ্ধ কারখানা স্থাপন প্রকল্প :
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার প্রায় ৩৫০ (তিনশত পঞ্চাশ) কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন । প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু করে ২০২২ সালে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও অদ্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি ১০% কাজও সম্পন্ন হয়নি, অথচ প্রকল্পের শতভাগ টাকাই মন্ত্রণালয় হতে ছাড় করে নিয়েছে। প্রকল্পটির নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিল্ক ইউনিয়নের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জমি ক্রয় ও গাভী লোন বিতরণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দূর্নীতি করে হাতিয়ে নেন। এছাড়াও বিভিন্ন মেশিনারীজ ক্রয়, স্থাপনা নির্মাণ ও গাড়ী ক্রয়ের নামেও কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নেয়। বর্তমান নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম মহোদয় মিল্কভিটার প্রধান কার্যালয়ে এসে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রধান মন্ত্রীর চাচা হওয়ায় মন্ত্রীর ক্ষোভ শেষ হইয়া গিয়াছে।
(৪) দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুগ্ধ কারখানা স্থাপন প্রকল্প :
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় হতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং প্রকল্পটির জানুয়ারী-২০১৭ হতে শুরু করে জুন- ২০২২ এর মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও শুধু স্থাপনা ছাড়া প্রকল্পটির অন্যান্য কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, প্রকল্পটি বর্তমান খরচ ১০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়ে গেছে কিন্তু প্রকৃত খরচ ১০ কোটির বেশি হওয়ার কথা নয়। চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক জনাব নাজিম উদ্দিন হায়দার তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে প্রকল্পটির জন্য জমি ক্রয় করেন। স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, খুবই কম মূল্যের জমি অতি উচ্চ দাম দেখিয়ে ক্রয় করেন এবং নিজে জমির মালিক না হয়েও উক্ত টাকা তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে নেয়। এ বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে, যা বর্তমানে অদৃশ্য হাতের ইশারায় দুর্নীতি দমনের তদন্ত বন্ধ রয়েছে। উক্ত দুর্নীতির ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন ও ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়া অদৃশ্য কারণে স্থগিত হইয়া যায়। উক্ত ঘটনা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক নাজিমউদ্দিন ২০/২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
(৫) দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প
রায়পুর দুগ্ধ কারখানায় সরকার কর্তৃক বরাদ্দ প্রাপ্ত ৫.৪৭ (পাঁচ একর সাতচল্লিশ) শতাংশ জমি মাত্র ২২ লক্ষ টাকায় প্রাক্তন ব্যাবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন সি বি এ নেতা (২৮) বৎসর। তার উদ্যোগে ও তার প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম থেকে খুলনা দক্ষিণ অঞ্চলের নদী বিচ্যুত এলাকা বাংলাদেশে মহিষের প্রচলন বেশি থাকায় এবং বাংলাদেশকে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ২/৩ লিটার মহিষের প্রাপ্ত দুধ কে ৩০-৪০ লিটার দুধের উৎপাদনের ব্যবস্থার জন্য মহিষের দুধের কৃত্তিম প্রজনন , মেশিন আমদানি ও মহিষের সাড় সহ তিন প্রকৃতির মহিষ আমদানি করে, কারণ মহিষের দুধের ফ্যাট বেশি। তিন প্রকৃতির যেমন বকনা বাছুর , গর্ভবতী মহিষ ও বাচ্চা সহ দুধেল মহিষ আমদানি করার ব্যবস্থা হয়। এর জন্য সরকার থেকে প্রজেক্ট অনুমোদন করানো হয়। টেন্ডারের ক্রয় আদেশ পার্টিকে দেওয়ার পর পূর্বের কমিটি চলিয়া যায়। বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু মিল্ক ভিটায় আসার পর পাঁচ একর চল্লিশ শতাংশ জমি দেখিয়া ফন্দি আটে কিভাবে অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। রায়পুর মহিষের প্রজেক্ট করা হইয়াছিল মহিষ সমবায়ীদের বিতরন করার জন্য এবং দুগ্ধের দাম হইতে ধাপে ধাপে প্রতি বিল হইতে ধাপে ধাপে সমবায়ীদের কাছ থেকে মহিষের মূল্য কর্তন করা হবে কিন্তু দুঃখের বিষয় শেখ নাদির হোসেন লিপু সমবায়ীদের বঞ্ছিত করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেড তৈরী করে এবং মহিষ লালন পালন শুরু করে। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় পুরো প্রজেক্টই ধ্বংসের সম্মুখীন হয় এবং তাদের অর্থ আত্মসাতে তসরুপে সুবিধা হয়।
(৬) দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গো-খাদ্য কারখানা স্থাপন প্রকল্প
দেশের দুগ্ধ অঞ্চল ভিত্তি করে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া, লাহিড়ী মোহনপুর এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ আনা হয়। প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্মিত হয়ে গত ২০১৪ সালে উদ্ভোধন করা হয় এবং উদ্ভোধনের পর পরই দেশের প্রান্তিক খামারীদেরকে কম মূল্যে গো-খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছিল, এতে খামারীদের গবাদি পশু লালন পালনে অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় প্রকল্পটির গো-খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে, সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্মরত কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করে গো- খাদ্য কারখানাটি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, মিল্ক ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানিতে রুমি ফিড নামে নিজস্ব গো-খাদ্য কারখানা তৈরি করেন এবং উক্ত কারখানার উৎপাদিত গো-খাদ্য গুলো অতি উচ্চ মূল্যে দেশের প্রান্তিক খামারীদের কাছে বিক্রি করছেন এবং এ কাজে তিনি মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জোর করে বিক্রির ব্যবস্থা করছেন। ইহাতে কেউ রাজী না হলে তাহাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আরো হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জমা প্রদান করেছেন যা নিম্নরূপ :
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রকল্পের ব্যায়
১ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মিল্কভিটার দবাদিপশুর ঔষধ উৎপাদন কারখানা স্থাপন ৫০০ কোটি
২ ৫টি বিভাগে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ৩২টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র, ১১৪টি বিক্রয় কেন্দ্র এবং ১টি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। ১৫০০ কোটি
৩ মাদারীপুরের টেকেরহাট উৎপাদিত দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চিজ প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প। ৭০ কোটি
৪ শিশুদের দুগ্ধ পানে অভ্যন্তকরণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও মেধা বিকাশের লক্ষে মিল্ক ফিডিং প্রোগ্রাম প্রকল্প। ৭০ কোটি
(খ) ব্যবস্থাপনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ গাভী ঋণ ও মেশিনারীজ ক্রয়ের অনিয়ম
মিল্ক ইউনিয়নের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব শামসুল আরেফীন, ব্যবস্থপনা কমিটিতে ঢোকার পূর্বে তিনি পার্টনারশিপে মিল্কভিটার বিভিন্ন প্রকল্পে মেশিনারি সরবরাহের কাজ করতেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় হতে তদন্ত করে জনাব শামছুল আরেফীন এর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কে কালো তালিকা ভুক্ত করা হয়। সেই কালো তালিকা ভুক্ত জালিয়াত ব্যক্তি বর্তমান সরকারের আমলে মুখোশ পরিবর্তন করে শেখ পরিবারের আত্মীয় বর্তমান মিল্কভিটার চেয়াম্যান ও শেখ হাসিনার চাচা লিপুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রুমি ফিড এর ব্যবসায়িক অংশিদার হিসাবে নিয়োজিত হয় এবং সেই সুবাধে তিনি সাবেক আইন সচিব দুলাল হোসেনের ছোট ভাই এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ লাভলু কে প্রথমে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন। এতে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত শেখ নাদির হোসেন লিপু। পরবর্তীতে জনাব শামছুল আরেফীন, ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর পরই তোরজোড় ভাবে শুরু হয় তার দুর্নীতির পুরানো চিত্র বর্তমানে তাকে চাঁদা না দিয়ে মিল্কভিটায় কেউ ব্যবসা করতে পারেনা। তিনি মিল্ক ইউনিয়নের ক্রয় বিভাগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাছাড়া তাহার নিজের কোন খামার ও গরু না থাকার পরও তিনি কেন্দ্রীয় সমিতির সদস্য হয়ে অবৈধ ভাবে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োজিত হয়েছেন, এ বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাঁকে সম্পূর্ণ সহযোগীতা করেছেন।
(গ) অপ্রয়োজনীয় দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি :
মিল্কভিটার বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণ তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অপ্রয়োজনীয় দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দেশের যেসব অঞ্চলে দুধ নাই, নিজেদের পরিবারের লোকজনদের গাভী ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনায় অপ্রয়োজনী দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। পূর্বের কমিটি সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে কয়েকটি জায়গায় কারখানার অনুমোদন ও মেশিন নেওয়ার পর শেখ নাদির হোসেন লিপু নোয়াখালী অঞ্চল বি এন পি এলাকা মনে করে ২ টি কারখানা চালু করে নাই। এমনকি রায়পুর দুগ্ধ কারখানা ২০১৫ সনের পূর্বে প্রতিদিন ১০/১২ হাজার লিটার দুধ হইলে ব্যাক্তিগত আক্রোশের কারণে উক্ত কারখানা কৌশলে বন্ধ করে দেয়।
(ঘ) অর্থের বিনিময়ে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রদান করা :
মিল্ক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এর আমলে বেশ কয়েক বার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে, বিভিন্ন তথ্যসূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে যে, নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের থেকে বিপুল পরিমাণে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যগণরা পদোন্নতি প্রদান করেছেন। ফলে পুরানো কর্মকর্তাদের মাঝে প্রচুর পরিমাণে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটি পুতুল, সিবিএ সভাপতি সরোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল কে ব্যবহার করে পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখেন । এইসব দুর্নীতিতে চেয়ারম্যানের পি, এ আঃ আলিম মূল ও সুচিষ্মান (টেকের হাট ইনচার্জ), ও গোপালগঞ্জের গালিব (সমবায় কর্মকর্তা) ভূমিকা পালন করেছেন।
(ঙ) বর্তমান ব্যবস্থপনা কমিটির চেয়ারম্যান ২০১৫ সালে নিয়োগের পর হইতে বিনা প্রয়োজনে শুধু মাত্র প্রতিজনের নিকট হইতে ১০/১২ লক্ষ টাকার বিনীময়ে প্রায় ২০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেন। নিয়োগ বাণিজ্যের অবৈধ লেন দেনের দায়িত্ব পালন করেছেন বর্তমান টেকেরহাট প্লান্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুচিষ্মান।, পি, এ আলিমুল ভাইস চেয়ারম্যান সামসুল আরেফিন প্যাটেল ও আব্দুল হামিদ লাভলু ও পরিচালক নাজিম উদ্দিন।
(চ) বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়োগের পূর্বে মিল্ক ভিটার প্রতিদিন গড়ে দুধ কালেকশন ছিল ১৮০,০০০ লিটার অথচ তার অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে দুধের কালেকশন কমে গড়ে ৬৫,০০০ লিটার হচ্ছে । অন্যদিকে পূর্বে যেখানে প্রতিদিন তরল দুধ বিক্রি ছিল সাড়ে ১৭০,০০০ লিটার বর্তমানে তা কমে ৬০,০০০ লিটারে নেমে গেছে । এছাড়াও নিন্ধ ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনা কমিটির অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারনে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে রয়েছে তা নিম্নরূপ :
দক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে মেধাহীন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব প্রদান করা ।
পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম ।
অফিস আওয়ারের পর রাত ১২ টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে খোশ গল্প করে অভিজাত আপ্যায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধিত করা। কথিত আছে এখানে বসে। প্রাক্তন আই জি পি বেনজির সহ গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারা তিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামাইছেন।
খামার ও দুধ না থাকা স্বার্থেও নিজস্ব আত্মীয় স্বজন দিয়ে সমিতি গঠন করে কোটি কোটি টাকার ঋণ দিয়ে লুট-পাট করা।
বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ আগামী মার্চ, ২০২৫ সালে শেষ হবে। মিল্ক ইউনিয়নের সমিতি বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি বেআইনী ভাবে নিজেদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের কে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সমিতির সদস্য করে নির্বাচনের জন্য ভোটার হিসেবে তৈরী করে রেখেছেন এবং সমবায় আইন পরিবর্তনের জন্য সমবায় অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সমবায় প্রতিষ্ঠানটিতে রক্ষার স্বার্থে এই মুহুর্তে সৎ ও অভিজ্ঞ ও প্রকৃত দুধ উৎপাদনকারী সমবায়ীদের দ্বারা যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদ্বয়ের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন এডহক ব্যবস্থপনা কমিটি গঠন করে মিল্ক ইউনিয়নের পরিচালনার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হলে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে দেশের প্রান্তিক কৃষক ও সমবায়ীরা মনে করেন। তবে আমরা সকল সমবায়ী মনে করি অতীতে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যারা ছিল তারা নিজেদের অভিজ্ঞ মনে করে নতুন এডহক কমিটিতে আসার জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে। অনেক পরিচালক মিল্কভিটার ক্ষতি সাধন করেছে তাদের বাদ দিয়ে যাদের কারণে মিল্কভিটা একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলছিল সেই সকল চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ও ডিরেক্টর দিয়া নতুন এডহক কমিটি গঠন করিলে মিল্কভিটা আবার একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। বিষয়টি প্রকাশ্য অথবা গোপনে তদন্ত করলে এবং দুগ্ধ ইউনিয়নের স্বর্ণ যুগের জন্য যারা কাজ করেছেন তখন সবাই আপনাদের পরিষ্কার নাম গুলি চলে আসবে ।
মিল্ক ভিটাকে রক্ষার স্বার্থে দুর্নীতিবাজ বর্তমান ব্যবস্থপনা কমিটি ভেঙে দিয়ে বিগত ১০ বছরের সকল অনিয়মের তদন্ত পূর্বক কঠোর বিচার এবং মিল্ক ভিটা বান্ধব অভিজ্ঞ প্রকৃত সমবায়ীদের দ্বারা একটি নুতন এডহক ব্যবস্থপনা কমিটি গঠন করে দেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করেন সংশ্লিষ্টরা।