নতুন বছরে নতুন সরকার,বঙ্গবন্ধু কন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে দেশবাসীর আকুতি- মিনতি : টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন আপনি। চারটে খানে কথা নয়। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনি সফল হলেন; দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে বিতর্কিতদের ঝেড়ে ফেলে পরিচ্ছন্ন একটি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করলেন। তাতে দেশজনতার কাছে বাহবা পাচ্ছেন বেশ। আপনি বিগত ১৫ বছরে , নিজস্ব অর্থায়ণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পারমাণবিক চুল্লি, মেট্রোর রেল,কর্ণফুলী ট্যানেল,গৃহহীন মুক্ত,মডেল মসজিদ সহ নানা উন্নয়ন কর্মকা- অব্যহত রাখতে আপনার কোন বিকল্প ছিলো না। গত ১৫ বছরে আপনি বাংলাদেশের অনেক চাওয়া-পাওয়া পূরণ করেছেন। বিদ্যুতে ব্যাপক সফলতা, রাস্তা-ঘাট, সেতু-ফ্লাইওভার সবই করে দিয়েছেন। দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করেছেন, সন্ত্রাস দমনে সচেষ্ট ছিলেন। দ্বাদশ নির্বাচনে আপনি দেশবাসীর কাছে আগামি ৫ বছর সময় চেয়েছেনও। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও সময় পেলেন। আপনার সে আশা পূরণ হয়েছে। এবার আপনার কাছে আমাদের দেশবাসীর কিছু চাওয়ার আছে। দেশবাসীবাসী আপনার কাছে ৩টি জিনিস চায়। আপনাকে তা দিতেও হবে। এটা আমাদেও সকলের দাবি। রাজনৈতিক কোন চাওয়া-পাওয়া নয়। যা চাইবো তা আমাদের অধিকারও। আপনার এ বিষয়ে স্বদিচ্ছাও আছে জানি। কাকুতি মিনতি করে; হাতে-পায়ে ধরে তা আমরা আপনার কাছ থেকে আমরা আদায় করেই ছাড়ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দিতে পারেন এমন আবদারই করবো আমরা আপনার কাছে। কি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার কাছে? ঐ যে বলেছি মাত্র ৩টি চাওয়া। আর যদি আপনি তা দিল-প্রাণ খুলে দিতেন আমি/আমরা ধন্য হতাম। চির ধন্য। ধন্য হতাম একারণে আমাদের এ আবদার রক্ষায় দেশবাসী চরম সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবে। তিনটি জিনিস দেশবাসীকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে! ঐ তিন অখাদ্য দেশের গায়ে পঁচন ধরিয়ে দিচ্ছে। ক্ষততে এখন ক্যান্সার সৃষ্টি হচ্ছে। বলা যায়, দেশবাসী খুব খারপ সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাজে সময়টার প্রায় দ্বারপ্রান্তে আমরা। আমাদের তিনটি চাওয়া পূরণ করতে পারলেই আমজনতা বেশী সুখী হতে পারতো। জানে বেঁচে যেতো; শান্তিতে বসবাস করতে পারতো দেশের মানুষ। মানুষের ওই চাওয়াগুলো পূরণে আপনি কাজও করে যাচ্ছেন। স্বচ্ছ মন্ত্রি পরিষদ গঠন করেছেন। আপনি আরেকটু বেশি নজর দিলেই দেশবাসীর সেই চাওয়া পূরণ হবে। আমাদের কি সেই চাওয়া?
১. ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই। ২. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ৩. সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তেই হবে॥ বোধ করি বড় কোন চাওয়া নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এমনটা চাইতেই পারি। জানি ওনি চাইলে তা দিতেও পারেন। দেওয়ার সদইচ্ছাটাই যথেষ্ট। দিবেন কিনা জানি না। সেটা ওনার বিষয়। তবে জীবদ্দশায় তিনটি কাজ করে গেলে, তাতে সফল হলে চিরকাল দেশবাসীর কাছে চির স্মরণীয়; চির বরণীয় হয়ে থাকবেন আপনি। এ কথা সত্য যে এ ব্যাপারে আপনি গত দশবছর যথেষ্ট কাজ করেছেন। মাদক নিয়ে জেহাদ ঘোষণা করেছেন তবে তাতে প্রশাসন এবং জনগণের সচেতনতা এবং আন্তরিকতার অভাব ছিলো। অপারেশন হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। এবার দুর্বার গতি নিয়ে, প্রবল শক্তিতে, আল্লাহর রহমত নিয়ে এ তিনটি কাজ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে করতেই হবে। আমরা দেশবাসী আপনার সাথে আছি। আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে আপনি জিরো টলারেন্স দেখাবেন।
> ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই : ভেজাল খাদ্য এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা। ভেজাল খেয়ে খেয়ে আমরা রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। ঘরে ঘরে রোগী। ক্যান্সারসহ জটিল রোগবালাই আমাদের দেহে ভর করেছে। মানুষ মরছে কঠিনসব রোগে। মানুষ মরে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাদের জন্য, কাদের নিয়ে আপনি রাজনীতি করবেন? তাই ভেজাল খাদ্য রোধে আপনার হুঙ্কার চাই। আপনি গর্জে উঠুন। আমরা আপনার পাশে আছি। ভেজালমুক্ত দেশ গড়তে আমরা কাজ করতে চাই। আপনি আপনার শক্তি দিয়ে; কৈশলে প্রশাসনকে জাগিয়ে দিন। বলে দিন “বাংলাদেশে কেউ খাদ্যে ভেজাল দিতে পারবে না; ভেজাল খাদ্য সরবরাহ করলেই মহাবিপদ”। সারা বাংলাদেশে রটে যাক এই কথা। আমরা কলাম লেখক সাংবাদিক সমাজ এটা প্রচারের দ্বায়িত্ব নিলাম। আমরা দেশকে ভেজাল মুক্ত করতে চাই। আমরা সেই স্বপ্ন দেখি দেশের প্রতিটি মানুষ ভেজাল মুক্ত খাবার খাবে, রোগমুক্ত থাকবে। মানুষ সুস্থ থাকলে, সুস্থ রাজনীতি হবে, দেশে সঠিক উন্নয়ন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এমন একটা দেশই উপহার দিবেন এই আশাবাদ আপনার কাছে। সভ্য সমাজে খাদ্য ভেজালের বিষয়টি একেবারেই অকল্পনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কোথায় ভেজাল নেই সেটি নিয়েই এখন গবেষণা করা দরকার। অনেকে ভেজাল খাদ্যের ভয়ে মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও চলছে ভেজাল। কোনো সভ্য সমাজে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি কল্পনাও করা যায় না। আমাদের দেশে ভেজালের যে সর্বগ্রাসী আগ্রাসন তাতে মনে করা যেতেই পারে এ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা সভ্যতার মাপকাঠিতে এদিক থেকে জংলি যুগের চেয়েও পিছিয়ে আছি। কারণ আর যাই হোক জংলি যুগের অধিবাসীরাও ভেজালের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা ভাবতেও পারত না। একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। সবাইকে ভেজালের বিরুদ্ধে জাগতে হবে। প্রশ্ন ওঠে প্রশাসন, আইন আদালত থাকা সত্ত্বেও ভেজালের দৌরাত্ম্য কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না। কেন এই ভেজালকারীদের দাপট? খাদ্যে ভেজালের অপরাধে দেশে কঠিন শাস্তিযোগ্য আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই। এ অবস্থাই ভেজালকারীদের উৎসাহিত করছে। আর এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভেজালের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আমজনতা, প্রশাসন, সংশি¬ষ্ট বিভাগের সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা প্রদর্শনের কোনই সুযোগ নেই। এ অবস্থায় সর্বতোভাবে তৎপর হতে হবে বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সর্বোপরি গণমাধ্যমসহ সকল মহলের ব্যাপক জনসচেতনতাও প্রত্যাশিত। প্রায়শই ভাবি এসব কি হচ্ছে। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে নাতো? কলেজ পড়ুয়া ছেলেটার মাথার চুলে চোখ পরতেই চোখ যেন ছানা বড়া। সাদা চুলে আটকে গেল চোখ। অসংখ্য চুলে পাক ধরেছে। ভাগ্নেটার চোখে মোটা পাওয়ারওয়ালা চশমা। বিছানায় কাতরাচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত চাচা। খাবারে ভেজালের জন্যই এমনটা হচ্ছে। এমন হচ্ছে কেন? আমরা খাবার খাচ্ছি; না খাচ্ছি বিষ! চারদিকে ফরমালিনের জয়জয়কার। মাছে, আমে, জামে, কাঠাল, তরকারিতে কোথায় নেই এই জীবন হন্তারক ফরমালিন। তেলে ভেজাল, চালে এমনকি নুনেও ভেজাল। কেউ কেউ তো বলেনই বিষেও নাকি ভেজাল। তাই যা হবার নয় তাই হচ্ছে। কিডনি নষ্ট হচ্ছে; হচ্ছে হাই প্রেসার; ক্যান্সার আর হার্ডস্টোকে অহরহ মরছে মানুষ। আমাদের অতি আদরে সন্তানরা অকালে ঝরে যাচ্ছে এসব অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে। প্রতিটি খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষ। আর সেই বিষ খেয়ে আমরা আর বেঁচে নেই। জীবিত থেকেও লাশ হয়ে গেছি। এ যেন জিন্দা লাশ। রোগে শোকে কয়েকটা দিন বেঁচে থাকা এই আরকি। প্রতিনিয়তইতো বিষ খাচ্ছি। ক’দিন আগে এক বিখ্যাত কলামিস্ট তার লেখায় লিখেছিলেন- “আমরা প্রতি জনে; প্রতি ক্ষণে; জেনে শুনে করেছি বিষ পান”। আরেক জন লিখেছেন- ‘কত কিছু খাই ভস্ম আর ছাই’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আর ভেজাল খেতে চাই না। সর্বদাই নির্ভেজাল খাবার চাই। আপনি দেশবাসীর জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করুন।
> দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা:-দ্রব্যমূল্যের চাপে গেল বছরটা মোটেও ভালো কাটেনি সাধারণ মানুষের। উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে অনেকের চাওয়া দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। তবে রাজনীতি কিংবা সরকারের পরিবর্তন নিয়ে মাথাব্যথা নেই খেটে খাওয়া মানুষের। তাদের চাওয়া– দিন শেষে পরিবার নিয়ে দু-বেলা খেয়েপরে বেঁচে থাকা।চট্টগ্রামের শহরে মূল সড়কের ফুটপাতে বাজার করতে আসেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা মামুন। তিনি বলেন, নতুন সরকারের প্রথম দৃষ্টি দেওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির দিকে, জিনিসপত্রের দামের দিকে। এখানে বাজার ব্যবস্থা কোনো কাজ করছে না। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।নতুন মন্ত্রিসভা দেশ ও মানুষের কল্যাণে ভালো কিছু করবে বলে আশা তাঁর।চট্টগ্রাম নিউমার্কেট এলাকায় কথা হয় গৃহিণী শামীমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি সরকারের নির্বাচনী প্রচারে দাম নিয়ন্ত্রণের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার বাস্তবায়ন দেখতে চান। ব্যবসায়ীদেরও দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসাধু উপায় পরিত্যাগ করতে হবে।চকবাজার এলাকায় রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর একার উপার্জনে চার সদস্যের সংসার চলে। পরিবারের বাজার খরচ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো গরিব মানুষ। রোজ আনি রোজ খাই। আগে ৫০০ টাকায় হাত ভইরা বাজার হইত। এখন ৫০০ টাকায় এক মুঠ বাজার আনতে পারি না। কয়টা আলু, পেঁয়াজ, সবজি কিনলেই শেষ। এতে তো আমরা চইলা খাইতে পারি না। দুই বেলা দুই মুঠ খাওয়ার নিশ্চয়তা চাই নতুন সরকারের কাছে।’চকবাজারে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন আয়েশা আক্তার। স্বামী রিকশা চালান। বাড়তি উপার্জনের আশায় ১৭ বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এই আয়োজন। কিন্তু বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল, খাওয়ার খরচের পর হাতে আর কোনো টাকাই থাকে না। প্রায় প্রতিদিনই তাদের খাবার ভাতের সঙ্গে আলু, বেগুন কিংবা শাক-সবজিতে সীমাবদ্ধ। মুরগির মাংস জোটে পাঁচ-ছয় মাসে একবার। গরুর মাংস খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। নতুন সরকারের কাছে আয়েশা আক্তারের প্রত্যাশা, শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন সরকার সীমার মধ্যে রাখে।ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম আসেন নিউমার্কেট এরিয়ায় চা দোকানে চলে তাঁর সংসার। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে থাকেন গ্রামে। কিন্তু গত ৮ বছরেও তাঁর স্বপ্ন অধরা। জীবনযুদ্ধই করে যাচ্ছেন তিনি। চোখের সামনে রাজনীতির পালাবদল দেখা সেলিম বলেন, টানাপোড়েনের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। নতুন সরকার যেন জিনিসপত্রের দাম কামায়। তাহলে হয়তো জীবনটা এতটা দুর্বিষহ থাকবে না। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়ে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন রাবেয়া আক্তার। স্বামী রিকশা চালান। বাড়তি উপার্জনের আশায় ১৭ বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এই আয়োজন। কিন্তু বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল, খাওয়ার খরচের পর হাতে আর কোনো টাকাই থাকে না। প্রায় প্রতিদিনই তাদের খাবার ভাতের সঙ্গে আলু, বেগুন কিংবা শাক-সবজিতে সীমাবদ্ধ। মুরগির মাংস জোটে পাঁচ-ছয় মাসে একবার। গরুর মাংস খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। নতুন সরকারের কাছে আয়েশা আক্তারের প্রত্যাশা, শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন সরকার সীমার মধ্যে রাখে।
> সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তেই হবে :- থানা পুলিশে, প্রশাসনে, বিদ্যালয়ে, মাঠে ঘাটে ঘুষ লাগে। ঘুষ-দুর্নীতি, প্রায়সই মারামারি হানাহানির দুর্বিপাকে আবদ্ধ হই আমরা। বেসরকারি, সরকারি প্রতিটি দফতরে ঘুষ-উপরির দৌরাত্ম্য। এমন কোনো দফতর নেই, যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি রোধে আপনি স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছেন। প্লিজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বলে দিন- “ঘুষ ছাড়া সকল সেক্টরে সেবা পাবে দেশের মানুষ“। আপনার আইটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছেন। তাতে দুর্নীতি রোধ হচ্ছে। মানুষের সেবা দ্বোরগোড়ে পৌছে যাচ্ছে। এর পরও ঘুষখোররা থেমে নেই। গোপনে-গাপনে অনেককিছু হয় নানা দফতরে। তা বন্ধ করে দিতে পারলে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরদের অবস্থা ত্রাহীমধুসুধন হবে। ওরা পালাবে; নয়তো ঘুষ ছাড়া কাজ-কাম করে দেশের মানুষকে শান্তি দেবে। ঘুষ ছাড়া সরকারি দফতরের সেবা মেলে না এটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যুগ যুগ ধরে। এমনকি বেসরকারি ব্যাংক-বীমার চাকরি ও সেবার জন্যও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ঘুষের লেনদেন। আপনি আপনার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ঘোষণা দিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নির্দেশ দিন। আপনার আরও ভাবমূর্তি উজ্জলের জন্য এটা খুব বেশি জরুরি। সন্ত্রাসীদের একটা ভালো গুণ আছে! ওরা চামচামীটা খুব ভালো জানে। তোয়াজ করতে ওস্তাদ। ওদের মুখোস ভদ্র মানুষের। ওরা শক্তের দারুণ ভক্ত, আর নরমের জম। ওদের চেনা বড় দায়। খোলসে ওরা নোংরামি ঢেকে রাখে তাই আমরা চিনতে পারি না। বিপদ দেখলে ওরা সটকে পড়ে। উল্টো পাল্টা করে। দেশবাসীরসুখ শান্তির জন্য ওদের সন্ত্রাসী কর্মকা- আপনাকে থামিয়ে দিতেই হবে। ব্যক্তি হিসাবে, সৎ মানুষ হিসাবে, নিরহঙ্কারী, দূর্দান্ত সাহসী বলে দেশের মানুষ আপনাকে এখন পছন্দ করে। এমন প্রচার আছে দেশে। কখনো কখনো দলীয় কতক অসৎ নেতাকর্মীর কারণে আপনার সুনামে ভাঁটা পরে। ওরা পরিচয় প্রকাশে বেশ পটু। দাপুটেও। তাই তাদের ভয় পায় সবাই। এই ভয়কে পুঁজি করে ওরা ব্যাবসায়ী, শিল্পপতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ অর্থ কামাইয়ে মত্ত হয়। ওদের আপনাকে চিনতে হবে। ওদের থামিয়ে দিতে হবে, দাবিয়ে রাখতে হবে। তাতেই দেশবাসী বেশ ভালো থাকবে। আপনার সুনামও আরও চাঙ্গা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারীনেত্রী। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এবং শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাকেও টপকে গেছেন শেখ হাসিনা। উইকিলিকসের সর্বশেষ গবেষণা মতে, শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের পুনরুত্থান করা সবচেয়ে আইকনিক নেত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন-দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এর মধ্যে দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেন। জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর তৈরি কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে করেন বিচার ব্যবস্থা পূর্ণগঠন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু, রাজনৈতিক হত্যা, বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবার, কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে বেশ কয়েকবার মরণ আঘাত চালায় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। তারপর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩, ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ সালে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস করেন। তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন (এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় ১,৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়নে কাজ করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ খাত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষাখাতে অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিনামূল্যে বই বিতরণ, মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ যা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলের ১৩ গুণ বেশি, শিক্ষক নিয়োগ ও মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেস সহ আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদও সফলতার সঙ্গে শেষ করেন।তা হলফ করে বলা যায়। বর্তমান হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নারীনেত্রী। শেখ হাসিনা নানা ইস্যুতে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধানও।সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার এবং সব মিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।গত ৭ জানুয়ারি সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এরমধ্যে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত রেখে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পায়। তবে ভোটের লড়াইয়ে ৬২টি আসনে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা।বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভা সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হয়।
৩৭ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা। এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকছেন। এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার ৩৬ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।তাই এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনা একজন প্রভাবশালী নেতা হিসবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।পরিশেষে বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদাত্ত আহবানে আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি যা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পথ।
এই সময়ের বাংলাদেশে তিনি একজন ব্যক্তি মাত্র নন, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গণমানুষের আশা-জাগানিয়া অভিভাবক। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত কেটে যায় দেশ মানুষের মঙ্গল চিন্তায়। তিনি দীর্ঘ জীবনের সুস্থতা নিয়ে আমাদের মাঝে সজীব থাকবেন এই প্রত্যাশা আমাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লষক
ইমেইল, drmazed96@gmail.com