জমে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম কানসাট আম বাজার। দামও ভাল। তারপরও আম চাষী ও আমব্যবসায়ীরা হতাশ। কারণ বাইরের জেলা হতে আমদানিকৃত আম্রপলি আমে কানসাট আম বাজার সয়লাব। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী ও আম চাষীরা ভীষনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনামও নষ্ট হচ্ছে। কারণ স্বাদ ও গুণগত মানের দিক থেকে বাইরের জেলার আম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের মধ্যে আকাশ জমিন পার্থক্য রয়েছে। বাইরের জেলা থেকে আমদানিকৃত আমগুলি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বলে চালিয়ে দিচ্ছে এক ধরনের অসাধূ ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকালে সরজমিনে কানসাট আম বাজার ঘুরে আম বিক্রেতা, ক্রেতা, আম চাষী ও আড়তদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,আমের দর ভাল থাকলেও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম ও ওজনে অনেক বেশী নেয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আম চাষীর। আম বিক্রী করতে আসা রানীহাট্টির আম চাষী মামুন জানান এ বাজারে আমের মণ ধরা হচ্ছে ৫২ কেজিতে। তাছাড়া কাঁটা প্রতি (দুই মনে এক কাঁটা একটা করে আড়তের জন্য একটা করে শ্রমিক বা কুলিদের জন্য আম দিতে হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় ও হাটে ঝাড়–দার, ডোম ও মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য অনেক স্থানে কাঁটাপ্রতি একটা করে আম দিতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন মাহবুব আলম, শিবনারায়ণপুর গ্রামের সাহেব আলি সহ আরো অনেকে। চককীর্তি ইউনিয়নের রানী বাড়ি চাঁদপুর গ্রামের আম চাষী ইব্রাহিম আলি জানান নওগাঁ, দিনাজপুর, ঠাকুর গাঁ,সাপাহার, রাজশাহী হতে প্রচার আম্রপলি আম কানসাটে আম বাজারে অবাধে বিক্রী হওয়ায় একদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উতপাদিত আমের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কারণ তারা আম্রপলি আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উতপাদিত আম বলে বিক্রী করছে। তিনি আরো জানান এক সপ্তাহ আগে খীরসাপাত আমের দর ছিল মণ প্রতি পাঁচ হাজার বা সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রী করতে হচ্ছে সাড়ে তিন হতে টাকা মণ।
কানসাট বাজার ঘুরে জানা গেছে লখনা আম মান অনুসারে ১৫/১৭শ টাকা মণ, ল্যাংড়া ৩২শ থেকে ৩৫ শ টাকা মণ আম্রপলি ২৫ শ টাকা হতে ৩৫ শ টাকা মণ। গুঠি দুই হাজার টাকা হতে ২২শ টাকা বানানা আম তিন হাজার হতে ৩৫শ টাকা মণ। বাজার ঘুরে আরো দেখা গেছে যে বাহির জেলা হতে আম্রপলি আমগুলি দূরের ক্রেতারা ক্রয় করতে বেশী আগ্রহী হওযায় অন্যান্য আমগুলির চাহিদা অনুপাতিকহারে কম। তাই দরও কিছু কম পাওয়া যাচ্ছে। আম্রপলি আম বাইরে থেকে না আসলে আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উতপদিত আমের দর ভাল পাওযা যেত বলে অনেক আম চাষীর ধারণা। অন্যদিকে কানসাটে শিহাব ফল ভান্ডারের ম্যানেজার বলেন কোন আড়তদার ওজনে বেশী নেয় না। বরং আম বিক্রেতারাই ৫২ কেজিতে মণ দেয়। এখানে আমাদের কোন লাভ নেই।
জননী মিম ট্রের্ডাস আড়তের ম্যানেজার তসিউর রহমান জানান আমরা আমাদের ব্যাপারীর নিদের্শমত ৫২ কেজিতে মণ ধরছি।আমাদের কিছু করার নেই। একই কথা কানসাট আম বাজারে প্রায় পাঁচ শ আড়তেই একই ভাবে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছে।এ ব্যাপারে কানসাট আম আড়তদার মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফারুক আহমেদ টিপু জানান আমরা এ মাসের প্রথম দিকে কানসাট,রহনপুর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জের আম চাষী,আম ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সাথে সভা করে ৪৮ কেজিতে মণ দরে আম ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তারপরও ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম কেনা বেচা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন আম কাঁচা ফল হওয়ায় মণ প্রতি ৪/৫ কেজি করে নষ্ট হয়। তাই ওজনে ব্যাপারীরা ওজনে বেশী নেয়। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সুনাইন বিন জামান বলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ী দের সাথে আলোচনা করে ৪৮ কেজিতে মণ ধরেআম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ব্যতিক্রম হলে ঈদের পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করা হবে। তিনি আরো বলেন এ বছরে আম উতপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায দুই লাখ ২০হাজার মেট্রিক টন।